নদী ভাঙ্গন আতংকে ৫০ হাজার মানুষের ঘুম হারাম

 

নাজমুল আলম মুন্নাঃ

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের কাকবসিয়া গ্রামে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিন ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। কাকবাসিয়া গ্রামের খেয়াঘাট সংলগ্ন প্রায় ৩০০ ফুট ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন এসব এলাকার মানুষ। স্থানীয় কাকবসিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রবল জোয়ারের আঘাতে খোলপেটুয়া নদীর কাকবসিয়া খেয়াঘাট এলাকায় মুহূর্তের মধ্যে ৩০০ ফুট রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

পরে নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় অনেকের। এসে দেখি প্রবল জোয়ারের চাপে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলা, আম্পান, বুলবুলসহ একাধিক দুর্যোগের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত রয়েছে এই এলাকার নদী রক্ষা বেড়িবাঁধ। তাদের দাবি, ত্রাণ চাই না চাই টেকসই বেড়িবাঁধ।

খেয়াঘাটের মাঝি আব্দুল খালেক গাজী ও মো. মফিজুল ইসলাম জানান, ফজরের নামাজ আদায় করে খেয়াঘাটে আসি। রাতের জোয়ারের পানি নামার সাথে সাথেই ভাঙনের ফাটল ধরা শুরু হয়। তার কিছুক্ষণ পরই ইটের সলিং ও যাত্রী ছাউনিসহ ঘাট পাড়ের প্রায় ৩০০ ফুট জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাঁধের সংস্কারকাজ না করলে নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করবে।

চেউটিয়া গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী রোকন সানা অভিযোগ করে বলেন, একই স্থান থেকে গত তিন বছরে তিনবার ভেঙেছে। যখনই ভাঙে, তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে ওই স্থানে মাটি দিয়ে যান। আগে থেকে কোনো কাজ তারা করেন না। ভাঙনের প্রায় দুদিন হলেও এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোক বা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কোন দেখা মেলেনি।

আনুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস জানান, সকালের ভাটা থেকে শুরু করে দুপুরের জোয়ার, মাত্র ৬ ঘণ্টার ব্যবধানে নদীগর্বে বিলীন হয়ে গেছে কাকবসিয়া খেয়াঘাটের যাত্রী ছাউনি এবং ১০০ মিটার ইটের সলিংসহ ৩০০ ফুট রাস্তা। খেয়াঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধের দ্রুত সংস্কারকাজ না করলে আনুলিয়া, প্রতাপনগর ও খাজরা ইউনিয়নের প্রায় ৪০ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা তৎপর না হলে নদীভাঙনে উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের নকশা বদলে যেতে পারে।

বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় জানান, খোলপেটুয়া নদীর কাকবসিয়া খেয়াঘাট এলাকায় ভাঙনের কথা শোনামাত্রই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। দ্রুত এর সমাধান হবে বলে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মোমেন আলী বলেন, আমরা ভাঙনের কথা শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভাঙন প্রতিরোধে নকশা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। দ্রুত এর কাজ শুরু হবে ।

Leave a Reply