হয়রানি আর হুমকি ধামকিতে সরব চিকিৎসক ফয়সাল, সাংবাদিক মহলে নিন্দা

টপ নিউজ প্রতিদিন ডেক্স

⚫ মিথ্যা অভিযোগে হয়রানি
⚫ সক্রিয় সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট
⚫ কখনো আ.লীগ কখনো বিএনপির প্রভাব বিস্তার
⚫ সাংবাদিক মহলে নিন্দার ঝড়
⚫ ফয়সাল বাহিনীর হুমকি
⚫ পায়ে ধরেই শেষ রক্ষা

সাতক্ষীরায় হুমকি ধামকি আর হয়রানিতে সরব হয়ে উঠেছে চিকিৎসক ফয়সাল। তথ্য ভিত্তিক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করলেই সাংবাদিককে কন্ঠ রোধ করতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করেন বেসরকারি হাসপাতাল ”হার্ট ফাউন্ডেশন” পরিচালক চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ।

আভিযোগ রয়েছ, চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ নিজের অপকর্ম ঢাকতে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করার নিমিত্তে তার একটি সক্রিয় সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট আছে। টাকার বিনিময়ে এসব সিন্ডিকেট দিয়ে ভুক্তভোগী প্রতিবাদকারীকে হুমকি ধামকি এমনকি মারপিট করে থাকেন।

এছাড়া ফয়সাল আহমেদ নিজের ক্ষমতার দাম্ভিকতা প্রদর্শনের জন্য কখনো কখনো রোগীকে নিজ হাতে জুতাপেটা, বেধড়ক মারপিট, কান ধরে উঠবস করানোর রেকর্ড আছে।

মারপিট করে শায়েস্তা করতে না পারলে শেষমেশ প্রশাসনে মিথ্যা অভিযোগ এনে মানুষকে হররানি করে থাকেন চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ। অভিযোগ আছে, চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ বিগত আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় সাতক্ষীরার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবু আহমেদ এর ছত্রছায়ায় থেকে অবলীলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড ইনটেনসিভ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ভুল চিকিৎসা কিংবা চিকিৎসকের গাফিলতির কারনে মারা গেলে চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ভুক্তভোগীর স্বজনদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতেন।

চিকিৎসক ফয়সালের বিরুদ্ধে রোগীকে জুতাপেটা, মারপিট, কান ধরে উঠবস, সিরিয়াল নিয়ে অনিয়ম সহ তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে চিকিৎসক ফয়সাল সহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ হয়। গত ১৪ নভেম্বর সংবাদ প্রকাশের পর হার্ট ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তিন জন ব্যক্তি সকাল থেকে সাতক্ষীরা বাসটার্মিনাল সংলগ্ন পত্রিকার এজেন্ট মুসফিকুর রহিমের অফিসের বিপরীতে একটি চায়ের দোকানে অবস্থান নেয়। এসময় বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় “হার্ট ফাউন্ডেশন” পরিচালক ফয়সাল সহ অভিযুক্তদের অপকর্মের ফিরিস্তি ঢাকতে সাংবাদিকদের নামে আসা পত্রিকার সৌজন্য কপি হকারদের নিকট থেকে জোরপূর্বক নিয়ে নেয়।

এর প্রেক্ষিতে “হার্ট ফাউন্ডেশন” পরিচালক ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর,এম,ও) ফয়সাল আহমেদ সহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে গত ১৬ -১১-২৪ তারিখ শনিবার বিকাল ৩.৩৪ মিনিট সময় সাতক্ষীরা সদরের উত্তর কাটিয়া বাসায় অবস্থান কালে চিকিৎসক ফয়সালের ইন্ধনে কথিত লিপু নামে এক সন্ত্রাসী মাদকাসক্ত ব্যক্তি সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল কে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি প্রদান করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ইব্রাহিম খলিল গত ১৬ নভেম্বর সাতক্ষীরা সদর থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যাহার জিডি নং ৯২৮।

এদিকে ৫ আগষ্ট আ.লীগ সরকারের পটপরিবর্তনের পর চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করার নিমিত্তে বিএনপি ঘেঁষা এলাকার কিছু নেতাদের টাকার বিনিময়ে ভুক্তভোগী রোগী, সাংবাদিক সহ প্রতিবাদকারীদের হুমকি ধামকি, এমনকি ঐসব নেতাদের দিয়ে পেশিশক্তি ব্যবহার করে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে।

এর আগে, সিরিয়াল না মেনে রোগী দেখার প্রতিবাদ করায় এক ব্রেন স্ট্রোকের রোগীকে জুতা দিয়ে পিটিয়ে কান ধরে উঠবস করিয়েছেন সাতক্ষীরা “হার্ট ফাউন্ডেশন” পরিচালক ডা. ফয়সাল আহমেদ। একপর্যায় ভুক্তভোগী রোগী বিউটি বেগমকে বাঁচাতে গিয়ে তার মেয়ে শ্লীলতাহানির শিকার হন। গত ৯ নভেম্বর দুপুরে হার্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদের কাটিয়া আমতলা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে,
গত ৮ নভেম্বর হার্ট ফাউন্ডেশনে সিরিয়াল দেন বিউটি বেগম। পরদিন ৯ নভেম্বর দুপুরে চিকিৎসা নিতে প্রথমে হার্ট ফাউন্ডেশনে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সেখানে সিরিয়াল অনুযায়ী দীর্ঘ সময় অপেক্ষারত থাকা কালীন ভুক্তভোগী বিউটি বেগম দেখেন সিরিয়াল ভেঙে অনিয়ম করে ডাক্তার অন্য রোগী দেখছেন। এসময় ভুক্তভোগী বিউটি বেগম ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে বিষয়টি অবহিত করায় চিকিৎসক তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার একপর্যায় এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও চড় থাপ্পড় মারতে থাকেন। পরে মাথার চুলের মুঠি ধরে টানা হেঁচড়া করে পা থেকে জুতা খুলে ভুক্তভোগীর চোখে মুখে কানে ও মাথায় মারেন। মারপিট শেষে উপস্থিত রোগীদের সামনে ভুক্তভোগী বিউটি বেগমকে কান ধরে উঠবস করান। কান ধরে উঠবস কালীন সময় বিউটি বেগমের মেয়ে থামাতে গেলে ডাক্তার ফয়সাল আহমেদ ক্ষিপ্ত হয়ে ভুক্তভোগীর মেয়েকেও মারধর করেন। এছাড়া শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটান। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বিউটি বেগম সাতক্ষীরা সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

অপরদিকে বেসরকারি হাসপাতাল “হার্ট ফাউন্ডেশন” পরিচালক ফয়সাল আহমেদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়া সহ একাধিক অনলাইন পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। রীতিমতো তিনি তার সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট দিয়ে গণমাধ্যম কর্মীকে হুমকি প্রদান করেন। হুমকি প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ প্রকাশ বন্ধ না হওয়ায় উপায়ন্ত না পেয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সেনা বাহিনী ক্যাম্পে চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ একটি অভিযোগ দেন।

অন্যদিকে হার্ট ফাউন্ডেশনের অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ভুক্তভোগী বিউটি বেগম ও তার স্বজনদের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পেয়েছেন। ভুক্তভোগী বিউটি বেগম বলেন, চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদের পক্ষ থেকে দেব্রত কুমার আমাদেরকে বারবার কল দেয় এবং বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য হার্ট ফাউন্ডেশনে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমরা মীমাংসার জন্য হার্ট ফাউন্ডেশনে গেলে সেখানকার ম্যানেজার দেবব্রত চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদের হয়ে আমার পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চায়। এ বিষয়ে তাদের মান সম্মান খুন্ন হচ্ছে এজন্য একটি আপসনামায় স্বাক্ষর করতে বলেন। ভুক্তভোগী বিউটি বেগম বলেন, ক্ষমা চাওয়ায় আমি আপসনামায় স্বাক্ষর করেছি। বিউটি বেগমের মেয়ে বলেন, সেদিন আমি মাকে বাঁচাতে গেলে আমাকেও মারধর করে খারাপ স্পর্শ করেছে। এ সময় ডাক্তার আমাকে ও আম্মুকে জুতা দিয়ে পিটিয়েছিলো। এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের পর মীমাংসার জন্য বারবার আকুতি -মিনতি করার কারণে আমি সহ আমার আম্মার সাথে হার্ট ফাউন্ডেশনে যাই। হার্ট ফাউন্ডেশন ম্যানেজার দেবব্রত আমার মায়ের পা ধরে ক্ষমা চায়। এছাড়া আমার সাথে ডাক্তারের নির্দেশে খারাপ ব্যবহার করা আল আমিন সহ আরেক স্টাফকে চড়-থাপ্পর মারে। পরে আমরা ১২ নভেম্বর মীমাংসা করে নিয়েছি।
এসব বিস্তর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৬ নভেম্বর সাতক্ষীরা বেসরকারি হাসপাতাল “হার্ট ফাউন্ডেশন” পরিচালক ডা. ফয়সাল আহমেদ মুঠোফোনে আলাপকালে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেন।

চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ কর্তৃক সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৭ নভেম্বর রাত ৯.৩০ মিনিট সময় সাতক্ষীরা শহরস্থ সুলতানপুর বড় বাজারের কেস্টো ময়রার মোড় সংলগ্ন “মেসার্স নুর এ্যালুমিনিয়াম স্টোর” এর সামনে থেকে সেনাবাহিনীর একটি টিম সিভিল পোশাকে এসে সাংবাদিক মোহাম্মদ মুজাহিদ কে সেনা ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে নিয়ে যায়। ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এদিকে সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে জিজ্ঞাসা শেষে সাংবাদিক মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের কোন সত্যতা না পাওয়ায় পরদিন সোমবার ১৮ নভেম্বর সাংবাদিদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলে ভুক্তভোগীর পরিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাংবাদিক মুজাহিদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী ক্যাম্পে অভিযোগ দেওয়ার ব্যাপারে ডাক্তার ফয়সাল আহমেদ এর সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, সেনাবাহিনীর কাছে আমি কোন অভিযোগ দেয়নি। তিনি বলেন, অন্যদিক থেকে অভিযোগ পড়েছে। আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় আবু আহমেদ এর ছত্রছায়ায় ক্ষমতার দাপট ও ৫ আগষ্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর বিএনপির কিছু নেতাদের হাত করে ক্ষমতার অপব্যবহার করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর না দিয়ে আলাপ কলটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

এ বিষয় সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোঃ আব্দুস সালাম মুঠোফোনে আলাপকালে বলেন, রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ মারপিট অভিযোগে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় আমি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর,এম,ও) ফয়সাল আহমেদ কে শোকোচ করি। এর প্রেক্ষিতে ডাক্তার ফয়সাল আহমেদ রোগীদের থেকে নেওয়া একটি লিখিত মীমাংসা পত্র দেখান। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ, হুমকি ধামকি মোটেও সমুচিত নয়।

এদিকে চিকিৎসক ফয়সাল আহমেদ কর্তৃক সাংবাদিক মোহাম্মদ মুজাহিদকে হয়রানি করার নিমিত্তে মিথ্যা অভিযোগ এবং বিএনপি পন্থী নেতাদের দিয়ে সাংবাদিক ইব্রাহিম খলিল কে হুমকি ধামকি প্রদান করায় সাংবাদিক মহলে ব্যাপক নিন্দার ঝড় বইছে।

Leave a Reply