মোঃলিমন হোসেন
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ছাত্র সোয়াইব আজাদ। সমাজের খুটিনাটি সমস্যা সমাধান এর লক্ষ্যে যার চিন্তা ভাবনা অটুট ভূমিকা রাখে। তাদের একটি দল প্রতিষ্ঠা করেছে অনলাইন ও অফলাইন ভিত্তিক সংগঠন ‘The Father’s Rights Bangladesh (TTFR)’। শুধুমাত্র (বাবাদের) পুরুষের অধিকার রক্ষায় নয় বরং– অসহায়, দরিদ্র, অবহেলিত, সন্তানহীন ও বৃদ্ধাশ্রমে পরে থাকা বাবাদের দেখাশোনা করা ও তাদের পাশে দাঁড়ানোই যার মূল লক্ষ্য।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সোয়াইব আজাদ বলেন ‘অসহায়, দরিদ্র, অবহেলিত, সন্তানহীন ও বৃদ্ধাশ্রমে পরে থাকা বাবাদের দেখাশোনা করা ও তাদের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের মূল লক্ষ নয়। বরং সমাজে নারীকে অবলা রূপে প্রতিফলিত করে যারা এই আইনের অপব্যাবহার করে যাচ্ছে তাদের রুখে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। তিনি আরো বলেন– বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। বিরোধীদলীয় নেত্রী একজন নারী। দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের প্রধান একজন নারী। অর্থাৎ নারীরা পিছিয়ে আছে বা তারা অনগ্রসর একথা আর সেভাবে বলা যায় না। বরং নারী সমাজ পরাধীনতার খোলস ভেঙে, নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে গেছে অনেকটা পথ। এটা আমাদের গৌরব ও অহংকার। কিন্ত সমাজে নারীদের এই সংগ্রামের আখ্যা দিয়ে পুরুষের (বাবাদের) উপর চালানো হচ্ছে নির্যাতন। পাঠানো হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। সারাজীবন মাথায় ঘাম পায়ে ফেলে স্ত্রী, সন্তানের জন্যে উপার্জন করা বাবারা আজ সুরক্ষিত নেই।
তিনি আরো জানান, আমরা ইতিমধ্যে ব্যাপক ভাবে সাড়া পেয়েছি, আমাদের প্রতিষ্ঠান সাড়ে পাঁচ হাজার ফলোয়ার অতিক্রম করতে পেরেছে এবং আমরা নতুন সেচ্ছাসেবক ও বিভিন্ন কোর্টের এডভোকেট আমাদের সাথে যুক্ত করছি। শুধুমাত্র ঢাকা নয় ধীরে ধীরে আমরা ৬৪ জেলায় আমাদের সেবা দিতে সক্ষম হব। এই মেধাবী শিক্ষার্থী ইতিমধ্যেই সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক কলাম ও বিভিন্ন শিক্ষনীয় গল্প এবং উপন্যাস লিখে পেয়েছেন পুরুস্কার লিখেছেন বইও। সোয়াইব আজাদের জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানাতে। তবে ছোটবেলা থেকে তার বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে সে মানুষকে বরাবরই সচেতন করে আসছে যা মন কেড়েছে সকল বয়সের মানুষের।
সমাজ উন্নয়নের লক্ষে সর্বদা চেষ্টা চালানোর পর অবশেষে আরো কয়েকজন মেধাবী কিশোর মিলে ‘The Father’s Rights Bangladesh (TTFR)’ প্রতিষ্ঠা করেন তাদেরই একটি দল। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আমাদের বলেন ‘আমরা আশা করি এই ছোট প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে সমাজের পুরুষদের অধিকার রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। আমরা আমাদের সদস্য সংখ্যা বাড়াতে দৃঢ় ভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।’ সমাজবিজ্ঞানী দের মতে, সমাজ দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বদলে যাওয়া সমাজেরই নতুন রূপ হচ্ছে পুরুষ (বাবাদের) নির্যাতন। নির্যাতিত পুরুষের কেউ শারীরিক, কেউ মানসিক, কেউ দৈহিক-আর্থিক, কেউ সামাজিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। ঘরে-বাইরে এ ধররের নির্যাতন প্রায়ই ঘটছে। তুলনামূলক কম হলেও নির্যাতিত পুরুষের সংখ্যা এদেশে নেহায়েত কম নয়।
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান থাকলেও নেই পুরুষ নির্যাতনের সঠিক তথ্য। ফলে নারী নির্যাতনের খবর ফলাও করে প্রকাশ করা হলেও অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনাগুলো। তবে সাম্প্রতিককালে পুরুষ নির্যাতনকে কেন্দ্র করে বেশকিছু সংগঠন গড়ে উঠছে। সমাজ বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ২৯ নং অনুচ্ছেদে নারীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে নারীর সুরক্ষার জন্য দেশে একাধিক আইন রয়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন-২০০০, এসিড নিরোধ আইন-২০০২, পারিবারিক সহিংসতা ও দমন আইন-২০১০, যৌতুক নিরোধ আইন-১৯৮০ উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য নারীর সুরক্ষার জন্য আইনগুলো তৈরি হলেও বর্তমানে এ আইনগুলোকে কিছু নারী পুরুষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। মানবাধিকার আইনজীবী সালমা সুলতানা বলেন, স্ত্রীরা নির্যাতিত হওয়ার পাশাপাশি অনেক সময় পুরুষও স্ত্রী কর্তৃক শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধে সুনির্দিষ্টভাবে নেই কোনো আইন। নারী ও শিশু নির্যাতনে পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল তৈরি হলেও পুরুষদের জন্য একটিও নেই। ফলে ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তা দেয়াটা দুরূহ হয়ে পড়ছে। তাদের থেকে সহায়তা পাওয়া একজন বাবা আমাদের জানান, আমরা চাই এই প্রতিষ্ঠানটি ‘পৃথিবীর সকল বাবাদের অধিকার নিশ্চিত হোক’ এই স্লোগান সামনে রেখে এগিয়ে যাক।