স্টাফ রিপোর্টার
গাজীপুর রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের রেকর্ড রুমে বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্য চলছেই। কর্মকর্তাদের ভাগাভাগি নীতিতে বাড়ছে সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কঠোর না হওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভ। রেকর্ড রুমের দায়িত্বে থাকা গাজীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছেন না। দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে ২০১৯ ও ২০২১ সালে দুটি মামলা করেছে। এরপরও তিনি দুর্নীতি অব্যাহত রেখে দুদককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। নগরীর মারিয়ালী এলাকায় অবস্থিত রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সের চতুর্থ তলায় জমির দলিলের সইমোহর নকল তোলার রেকর্ড রুম। সেবাপ্রার্থীরা নকল তুলতে তল্লাশিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ২০ টাকার কোর্ট ফি ও স্ট্যাম্প দিয়ে আবেদন করা হয়।
একই সঙ্গে রেকর্ড কিপারের কাছে প্রতি নকলে জমা দিতে হয় ১৩৫০ টাকা। জমির রেজিস্ট্রিকৃত মূল্য ও পাতা অনুযায়ী নকলপ্রতি গড়ে সরকার রাজস্ব পায় ৪০০-৫০০ টাকা। বাকি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা ঘুষ হিসেবে জমা হয়। মারিয়ালীতে গত সেপ্টেম্বরে অফিস স্থানান্তরের পর ওই ফি আরও ২০০ টাকা বাড়িয়ে ১৫৫০ টাকা বেঁধে দিয়েছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম। যাতে মাসে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা অতিরিক্ত বাণিজ্য হত। ঘটনার আড়ালে-তে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ২০০ টাকা কমিয়ে পূর্বের রেট বহাল রাখা হয়েছে। রেকর্ড কিপার শামীমা সুলতানার চেয়ারের পাশে বসে একাধিক নকলনবিশ তল্লাশিকারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করেন। পরে রেকর্ড কিপারের কাছে হিসাব বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
শামীমা সুলতানাও তল্লাশিকারক হৃদয়কে দিয়ে নকলের বাণিজ্য শুরু করেছেন। গাজীপুর যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ রেকর্ড রুমে দৈনিক ৪০০-৫০০ নকলের আবেদন জমা পড়ে। মাসে জমাকৃত আবেদনের সংখ্যা দাঁড়ায় আট হাজার থেকে ১১ হাজার। নকলগুলো থেকে গড়ে ৮৫০ টাকা করে মাসে পৌনে এক কোটি টাকার বেশি ঘুষ আদায় করা হয়। স্বাক্ষর বাবদ নকলের সংখ্যা গুণে এই বিপুল টাকার বড় অংশ নেন সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম। বাকি টাকা রেকর্ড কিপারসহ অন্যদের মধ্যে পদ অনুযায়ী ভাগ-বাটোয়ারা হয়। সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম গত বছরের ১৩ মার্চ গাজীপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদান করেন। তাকে যুগ্ম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসেরও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি চলতি বছরের ২০ নভেম্বর অবসরে যাবেন। দলিল লিখক সমিতির নেতৃস্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলমকে সমিতির দু-একজন নেতা মদদ দিচ্ছেন। বিনিময়ে তারা কিছু বাড়তি সুবিধা ভোগ করছেন। বিপরীতে কাটা পড়ছে জেলাবাসীর পকেট। তারা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, একজন দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা দুদকের একাধিক মামলার আসামি হওয়ার পরও কীভাবে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন? দুদক যদি চিহ্নিত ব্যক্তির দুর্নীতি প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থা নিতে না পারে, তাহলে সাধারণ মানুষের কী উপকার হল? জনস্বার্থে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ সকল বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাবরেজিষ্টার জাহাঙ্গীর আলমকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভি করেননি। এই ব্যাপারে তদন্ত কমিটি নেমেছে।