পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:-
“স্যার আমাকে শুধু দশ হাজারটা টাকা দেন, আমি কালকে বিদেশে চলে যাবো, টাকা তুলতে আর আসবো না স্যার” অথবা “ভাই আমার রোগীটা আইসিইউতে রেখে আসছি, অনলাইন বলে শহরের ব্রাঞ্চগুলো টাকা দিচ্ছে না, মেডিকেলে আড়াই লক্ষ টাকার উপরে বিল আসছে, আমাকে শুধু পঞ্চাশ হাজারটা টাকা হলেও দেন” বা “স্যার আমার মেয়ের বিয়ের জন্য ডিপিএসটা করেছিলাম, টাকা না পেলে আগামী শুক্রবার সব আয়োজন নষ্ট হয়ে যাবে, কিছু কিছু হলেও দেন স্যার” ইত্যাদি বিষয়গুলো ব্যাংকারদের মনকে নাড়া দিচ্ছে আবার কিছু কিছু গ্রাহকের মারমুখী আচরণ (গালি-গালাজ) নিজের কর্মক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে চলেছে। অনেকেই মনে করছেন ব্যাংকার এবং গ্রাহকদের মধ্যকার সম্পর্কের এরকম অবনতি অতীতে আর হয়েছে কিনা কারো জানা নেই।
বর্তমানে বাংলাদেশের এই ব্যাংকিং খাত তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে। সরকার পতনের পর দেশের ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গ্রাহকরা তাদের চাহিদা মোতাবেক টাকা তুলতে পারছেন না এবং অনেকের জরুরি প্রয়োজনে বেশি টাকার চাহিদা থাকা সত্বেও পর্যাপ্ত টাকা তুলতে পারছেন না। এর কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানা, চিকিৎসা সেবা, মানুষের বিদেশ গমন ইত্যাদি বিষয়ের উপর ব্যাপক হারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যদিও বা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা উত্তোলনে একটি নির্দিষ্ট সীমা বেধে দিলেও তা এখন আর নেই। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংকে দেখা যাচ্ছে দশ হাজার বা পনের হাজারের বেশি টাকা গ্রাহকদেরকে দিতে পারছেন না।
তাছাড়া এই তারল্য সংকট ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক নগদ প্রবাহে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।
বর্তমানে গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক টাকা উত্তোলন করতে না পারায় ঐ টাকা গ্রাহকদের বিশেষ কোন কাজে আসছে না বলে অনেকেই মনে করছেন। তাছাড়া একজন গ্রাহককে এক লক্ষ বা তার অধিক পরিমাণ টাকার জন্য দিনের পর দিন দশ-বিশ হাজার করে এক বা একাধিক চেকের মাধ্যমে টাকা তুলতে হচ্ছে। একারণে ব্যাংকার এবং গ্রাহকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটি সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত ব্যাংকের প্রতি আস্তা হারাচ্ছেন। অনেকেই ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছেন না। এমনকি গুরুতর অসুস্থ রুগীকে হাসপাতালে ক্যাশ টাকার প্রয়োজনে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। ফলে সাধারণ গ্রাহকরা টাকা জমা করা থেকে বিরত রয়েছেন। যার ফলে ব্যাংকের তারল্য সংকট আরো তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পারায় প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এর ফলেও দেশের রিজার্ভে বিস্তর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এভাবে আর কয়েকদিন চললে ব্যাংকসহ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং মানুষের জীবন মান উন্নয়নের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
সুতরাং দেশের সাধারণ মানুষ চাই এই পরিস্থিতির একটি যৌক্তিক সমাধান। যে সমাধানে মানুষের চাহিদার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো স্বাভাবিক হয়ে ফিরে আসবে এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন এবং সংস্কার হবে। প্রবাসীরা নির্বিঘ্নে টাকা পাঠিয়ে দেশের রিজার্ভের উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে ব্যাংকের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে এবং গ্রাহকের আমানত চাহিবামাত্র ব্যাংক দিতে বাধ্য থাকবে। এজন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন দায়িত্ব প্রাপ্ত গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একটি যৌক্তিক সমাধান এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারবে। অন্যথায় দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতটি অচিরেই ভেঙে পড়বে।