নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা হুমকি হয়ে উঠছে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা স্থানীয় রাজনৈতিক আশ্রয় বা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠছে বলে জনসাধারনের দাবী। চাঁদাবাজি, জমি দখল, আধিপত্য বিস্তার, মারামারি, ছিনতাই, ইভটিজিং এবং সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে দ্বন্ধ ও হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ডে তারা সহজেই জড়িয়ে যান। অনেক সময় তাদের মদদদাতা প্রভাবশালীরাও তাদের দিয়ে অনেক অপকর্ম ও তাদের পিছনের শত্রু সরাতে কাজে লাগান। এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মাঝে মাঝে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা গ্রেফতার করলেও জামিনে ছুটে এসে আবার এলাকায় তারা সংঘবদ্ধ হয়। পূর্বের চেয়ে আরো মারাত্নক আকার ধারন করে সমাজ ও পরিবারকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের অনেকেই হন স্কুলের ছাত্র এবং পাড়ার বখাটে ছেলেরা। তারা শুধু নিজেরা প্রভাব বিস্তার করেনা, তারা এলাকার অষ্টম শ্রেনী থেকে উপরের দিকের অনেক ছাত্রকে বাধ্য করে তাদের সাথে যোগদানের জন্য। শুধু তাই নয়, তারা প্রয়োজনে টাকার লোভ দেখিয়ে এই শ্রেনীর ছাত্রদের তাদের সাথে জড়ানোতে উদ্বোদ্ধ করে। তারা তাদের উগ্র বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অনেক সময় হিরো হওয়ার প্রবনতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার দিয়ে ছড়িয়ে দেয়। বায়েজীদ থানাধীন এলাকাগুলোতে কিশোরগ্যাংয়ের উৎপাত ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে। বায়েজিদ, রুপাবাদ, হামজারবাগ ফুলবাগান হয়ে আতুরারডিপো রেলবিট, বার্মা কলোনী, চন্দ্রনগর, শান্তিনগর, সৈয়দনগর, বালুচড়া, কুলগাঁও কলেজ এড়িয়া, নয়ারহাট, তারাগেট, শেরশা কলোনী, বাংলাবাজার, আরেফিন নগর, ছিন্নমুলসহ কয়েকটি এলাকায় দেখা যাচ্ছে কিশোর গ্যাংদের সক্রিয় অবস্থান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এলাকাবাসী বলেন, আমরা দিনের পর দিন হুমকির মুখে বেচে আছি। তিনি আরো বলেন, যাদের নেতৃত্বে চলছে এই এলাকার কিশোর গ্যাং তারা হলেন ছিন্নমুল ও আরেফিন গেইট, সুপারী বাগান কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রন করে সাদ্দাম হোসেন প্রকাশ বাচা, আজিজ উল্লাহ প্রকাশ রানা, শান্তিনগরের আরিফুল ইসলাম নয়ন, মোহাম্মদ নগরের ৫ নম্বর রোডের মনির হোসেন পাটোয়ারী টিটু, কুঞ্জছায়ায় বায়েজীদ থানা সোর্স হিসাবে পরিচিত সোহাগ সিকদার প্রকাশ লেঞ্জা সোহাগ, মোহাম্মদ নগর ৭নম্বর রোডের তারেক আজীজ মামুন, মোহাম্মদ নগরের ৬ নম্বর রোডের সাইমুনুর রশীদ, মোহাম্মদ নগরের আলমগীর সড়কের মোহাম্মদ রিয়াদ প্রকাশ হাত কাটা রিয়াদ, মোহাম্মদ নগরের হৃদয়, এছাড়া টাইগার গ্যাং, টেনশান গ্রুপ, নামে বায়েজিদে আরো কয়েকটি কিশোরগ্যাং গ্রুপ নেতৃত্ব দিচ্ছে। জানা যায়, সোহাগ সিকদার প্রকাশ লেঞ্জা সোহাগের বিরুদ্ধে গত ২৮শে ডিসেম্বর ২০২৩ সালে একটি জিডি হয়েছে । যার নং ২০২৪ তাছাড়া মেট্রোপলিটন মেজিষ্ট্রেট আদালতে কুহিনুর আক্তার নামে জনৈক মহিলা বাদী হয়ে একটি সি আর মামলা দায়ের করেন , যার মামলা নং ০৯/২৪, এদিকে হামকা আল আমিন গ্রুপের নেতা আল আমিন গ্রেফতার হলেও তার সহযোগী সদস্যরা এখনো এলাকায় বহাল তবিয়তে চালাচ্ছে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম। তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমিনজুট মিল এলাকায় আজ(১২জানুয়ারী২০২৪) মাদক বিরোধী অভিযান হলে মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোরগ্যাংয়ের লিডাররা তাদের উপর আক্রমন করে। একপর্যায়ে দুইজনকে গুরুতর আহত হলে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করায়। কামরুল নামে এক লোককে মেরে আহত করে। এক সুত্র থেকে জানা যায়, আক্রমন কারী কিশোরগ্যাং নেতারা হলেন, পিন্টু, বাপ্পি, শরীফ, লাল সুমন। জানা যায়, ২০২২ সালের ২৯শে এপ্রিলে লাল সুমন গ্যাংয়ের লাল সুমনসহ তার সহযোগী ৫ ছিনতাইকারীকে চট্টগ্রাম রেলের পুরান ষ্টেশনে রোডে হজরত হাজী ভঙ্গি শাহ মাজারের সামনে থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। মামলার বাদীনীর স্বামী ফজলুর রহমান রিপন বলেন, গত ৩০/১২/২০২৩ইং তারিখে পূর্ব শত্রুতার জেরে বায়েজিদ থানার পাশেই আমার বাসার সামনে সোর্স সোহাগের নেতৃত্বে একদল হামলাকারী অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, হুমকি ও মারধর করে। যে হামলার সম্পূর্ন ভিডিও সিসিটিভি ফুটেজে আছে। স্থানীয় লোকজন এসে আমাকে আহত অবস্থায় রক্ষা করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ নিয়ে আমি অস্স্থু থাকায় আমার স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় জিডি ও কোর্টে মামলা করেছেন। আমিন জুট মিল এলাকার এক দোকানদার বলেন, আগে মিল যখন চালূ ছিল তখন কিশোর গ্যাংয়ের এতো উৎপাত দেখিনি। এখন কর্মচারীরা তাদের বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ায় কিশোর গ্যাংয়ে সদস্যরা এখনে উৎ পেতে থাকে । রাতের আধার ঘনিয়ে আসলে রাস্তা দিয়ে যাওয়া পথচারীদেরকে আক্রমন করে মোবাইল ও টাকা ছিনতাই করে। ছিনতাইয়ের পর তারা আর এখানে থাকেনা, খুব দ্রুত সরে যায়। কিশোর গ্যাং নিয়ে জানতে ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলীকে মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আমিন জুট মিলের মাদক বিরোধী অভিযানে হামলা নিয়ে বায়েজীদ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সাহাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবো।