রূপসায় গ্রামীণ সড়কের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম তিন চাকার ট্রলি: অহরহ ঝরছে তাজা প্রাণ

ফ.ম.আইয়ুব আলী,রূপসা:

রূপসা উপজেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট পাড়ায় মহল্লায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ট্রলি। ইট বহনকারী এসব ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে এ পর্যন্ত অর্ধ শতাধিক লোকের প্রাণ গেছে বলে জানা গেছে। রূপসার অবৈধ ইটের ভাটার মালিকরা ইট ও কাঠ পরিবহন কাজে এইসব ট্রলি ব্যবহার করে থাকে। এইসব ইটের ট্রলি রাস্তা দিয়ে চলাচলের কারণে রাস্তার আয়ুষ্কাল দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে ,অপরদিকে একের পর এক এরা দুর্ঘটনা ঘটালেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান করা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।


সূত্র জানায়, রূপসা উপজেলার ৭৬ টি ইট ভাটায় ইট পরিবহন কাজে শত শত ট্রলি ব্যবহার করে আসছেন যার আইনগত কোন ভিত্তি নেই। যেমন নেই ইটভাটা গুলোর অস্তিত্ব, তেমনি এসব টলির নেই কোন অস্তিত্ব। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এইসব ট্রলি অতিরিক্ত ইট বোঝাই করে বীরদর্পে রাস্তা ও অলিতে গলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। রূপসা উপজেলার তালিমপুর, নিকলাপুর, শ্রীরামপুর, দেবীপুর, নেহালপুর, আলাইপুর, শ্রীফলতলা সহ বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ৭৬ ইটের ভাটা রয়েছে। প্রত্যেকটি ভাটায় ইট বহন করার জন্য কমপক্ষে চারটি করে ট্রলি রয়েছে। সে হিসেবে প্রতিদিন রূপসার বিভিন্ন রাস্তা ও অলিতে গলিতে কমপক্ষে ৩০০ মত অবৈধ টলি চলাচল করছে।

এর নেই কোন লাইসেন্স, নেই কোন নাম্বার প্লেট, নেই কোন ইঞ্জিন নাম্বার এমনকি রাতে পথ চলার জন্য এদের নেই কোন আলোর ব্যবস্থা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এইসব ট্রলি রাত্রে চলাচলের সময় টর্চ লাইট অথবা মোবাইল লাইট এর মাধ্যমে আলো জ্বালিয়ে চলাচল করছে ,যে কারণে এসব এলাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পূর্ব রূপসা বাস স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে ইলাইপুর সেন্টমার্টিন সিফুড সংলগ্ন সোহরাবের গ্যারেজ পর্যন্ত কমপক্ষে ৮-১০ টি অবৈধ ট্রলি নির্মাণের কারখানা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে তারা ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে এসব অসাধু গ্যারেজ মালিকরা এই অবৈধ ট্রলি নির্মাণ করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

আর এসব কারণে প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে কমপক্ষে গত কয়েক বছরে অর্ধশত মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছে। অবৈধ এসব ট্রলির থেকে রক্ষা পাচ্ছে না রাস্তায় চলাচল ভ্যান, রিক্সা ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা। দু-একটি ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্থানীয় পুলিশ দুর্ঘটনা ঘটার পর অবৈধ এই ট্রলি আটক করলেও পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে তারা দফারফা করে ট্রলি ছাড়িয়ে নেয়।

এর পাশাপাশি ট্রলি চলাচল রত রাস্তার আয়ুষ্কাল ও দিনদিন কমে আসছে। উঠে যাচ্ছে পিচ ঢালা রাস্তার পিস। রাস্তার অধিকাংশ অংশে দেখা যাচ্ছে হয় রাস্তা ডেবে গেছে নয়তো পিস উঠে তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রাস্তা দিয়ে এসব অবৈধ ট্রলি চলাচল করার সময় রাস্তার পাশে নির্মিত ঘর বাড়ি গুলো কেঁপে ওঠে । মনে হয়, এদেরকে আটক বা থামানোর কেউ নেই।
রাস্তায় চলাচলরত এসব ট্রলীর অপঘাতে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদের সাথে স্বল্প টাকার বিনিময়ে দফারফা করে এসব ইটভাটার মালিকরা রমরমা এই ইটের ব্যবসা চালিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে এদের দেখার যেন কেউ নেই।


জনস্বার্থে এসব অবৈধ ট্রলি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তায় চলাচলরত অবৈধ টলিগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় জনসাধারণ তথা ভুক্তভুগি মহল প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Leave a Reply