আলমগীর শরীফ, ঝালকাঠি প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির রাজাপুরের শুক্তাগড় ইউনিয়নের নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের ক্লাব এলাকায় শুক্রবার ভোররাতে বিরোধী জমি দখল নিতে গিয়ে ঘুমন্ত বৃদ্ধ আবুল হোসেন মৃধার পরিবারের নারীসহ ৭ জন সদস্যের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এ ঘটনায় অপরপক্ষেরও ৪ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয় হামলাকারীদের পক্ষে।
এসময় আবুল হোসেন মৃধার বসতঘরে ভাঙচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে অভিযোগ করেন আহতরা। খবর পেয়ে রাজাপুর থানার পুলিশ ঘটনস্থলে গিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ ৩ জন হামলাকারীকে আটক করেও ছেড়ে দেয় বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। আহতদের মধ্যে আবুল হোসেন মৃধা (৫০) ও তার ছোট ভাই মৃত বাবুল হোসেনের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছে।
অপর আহতরা হল আবুল হোসেন মৃধার ছেলে সোহেল মৃধা (২২), স্ত্রী পারভীন বেগম (৪৫), শ্যালক কামাল হাওলাদার (৩৩), মৃত বাবুল হোসেনের ছেলে ইমন (১২), সোহেল মৃধার স্ত্রী মিম আক্তার (২০) ও তার ৪ মাস বয়সী শিশু পুত্র মাহমুদ। আহতরা অভিযোগ করে জানান, ২০১২ সালে আবুলের ফুফুর কাছ থেকে বিভিন্ন দাগের ১২ শতাংশ জমি ক্রয় করেন মোয়াজ্জেম হোসেন মনোয়ার। কিন্তু এক জায়গা থেকে ভোগ দখলের জন্য আবুল হোসেনের বসতঘরে জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে। এ নিয়ে কয়েকদফায় শালিস বৈঠক ও আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
শুক্রবার ভোররাতে জমি ক্রেতা মোয়াজ্জেম হোসেন ও মনোয়ারসহ তার বেয়াই শুক্তাগড় ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সোবাহান হাওলাদার ও তার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম চানের নেতৃত্বে আবুল হোসেনের বসতঘরে প্রায় অর্ধশত ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে স্বশস্ত্র হামলা চালায়। আবুল মৃধাকে সুপারী গাছের সাথে বেঁধে কুপিয়ে পিটিয়ে জখম করে বসতঘরের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে।
এছাড়াও চোখে গ্যাস স্প্রে করে বসতঘরে ভাঙচুর লুটপাট চালিয়ে সবকিছু কুপিয়ে পিটিয়ে তছনছ করে দেয়। এসময় নবজাতকসহ ঘুমন্ত একাধিক শিশুরাও হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। আহতরা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়ে হামলাকারীদের মধ্যে ৩ জনকে দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ আটক করলেও রহস্যজনকভাবে তাদের ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। আহতদের অভিযোগ হামলাকারীরা সবাই আওয়ামলীলীগের লোক।
শুক্তাগড় ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সোবাহান হাওলাদার ও তার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম চান অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মনোয়ার তার ক্রয়কৃত জমি দখল নিতে গেলে দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলা বাধে। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে আমাকে ফোন দিলে আমি ঘটনাস্থলে যাই, আমি মারামারির সাথে জড়িত না। তৌহিদুল ইসলাম চান কয়েকদিন ধরেই ঢাকায় অবস্থান করছে, তিনিও এ মারামারির সাথে জড়িত না বা ঘটনাস্থলে ছিলও না বলে জানান। অভিযোগ অস্বীকার করে মোয়াজ্জেম হোসেন মনোয়ার জানান, সকালে ফজরের নামাজ পড়ে হাটতে বের হলে প্রতিপক্ষরা অতর্কিত হামলা করে।
দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। এতে রফিকুল ইসলাম নান্নুসহ তাদেরও চারজন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। রাজাপুর থানার ওসি ইসমাইল হোসেন জানান, নারিকেল বাড়িয়া গ্রামে দু’গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা শুনে পুলিশ নিয়ে নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়েছি। উভয় পক্ষের কাছেই লাঠিসোটা থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুপক্ষকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, যাতে বড় কোন দুর্ঘটনা না ঘটে। কাউকে আটক করা হয়নি। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।