ইমাম হাসান জুয়েল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ব্যবসায়ী ও মৌচাক হোটেলের মালিক দুরুল হোদা নিহত হওয়ার পর তার টেলিকমের দুইটি দোকান দখল নেয় তার ভাই-ভাতিজারা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নিহত ব্যবসায়ী দুরুল হোদার স্ত্রী-সন্তানরা বুঝে পেলেও নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি অব্যাহত রেখেছে দখলকারীরা। এঘটনায় তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অসহায় ও নিরাপত্তাহীনতায় দিন যাপন করছেন নিহত দুরুল হোদার স্ত্রী নুরজাহান খাতুন।
জানা যায়, গত ৩১ অক্টোবর সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন শিবগঞ্জ মৌচাক হোটেল নিরব টেলিকম ও নাফিস টেলিকমের মালিক দুরুল হোদা। তিনি নিহত হওয়ার পরই হোটেল ও দোকান গুলো দখলে নিয়ে তালা দেয় তার ভাই কবীর, রুহুল এবং ভাতিজা রানাউল ইসলাম শাহনাজ কারিম ও শাকিল। মৃত্যুর কয়েকদিন পর দুরুল হোদার স্ত্রী নুরজাহান তাদের কাছে চাবি চাইতে গেলে উল্টো নানারকম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায় নুরজাহানকে৷
এনিয়ে নিহত দুরুল হোদার স্ত্রী নুরজাহান পুলিশ সুপার ও শিবগঞ্জ থানার ওসিকে অভিযোগ দিলে গত ০৬ ডিসেম্বর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও সহযোগিতায় তালা ভেঙে দোকানে প্রবেশ করে নুরজাহান। এসময় নুরজাহানের মামাতো ভাই মারুফ হোসেনকে বেধড়ক মারধর ও জখম করে অবৈধ দখলকারীরা। পরে আহতের স্বজনরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্বার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এনিয়ে নুরজাহান ও তাদের স্বজনরা থানায় মামলা করতে গেলে সেখানেই হুমকি দেয় দখলকারীরা।
ভুক্তভোগী নুরজাহান খাতুন বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পরপরই আমার স্বামীর ভাই ও ছেলেরা অবৈধভাবে নিরব টেলিকম ও নাফিস টেলিকমের দোকান দখলে নেয়। তাদের কাছে চাবি চাইলে উল্টো আমাদেরকেই নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। পরে এসপি মহোদয়কে অভিযোগ দিলে তাদের সহযোগিতায় দেকানঘর বুঝিয়ে পেয়েছি। কিন্তু এরপরেও আমাদের উপর নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে তারা। বর্তমানে তিন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
নুরজাহানের ভাই মাহফুজ আহমেদ জুম্মা জানান, বোন ও ভাগ্নে-ভাগ্নীদের চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছি৷ প্রতিনিয়ত কবীর, রুহুল, রানাউল ইসলাম শাহনাজ ও শাকিল কারিম তাদের লোকজন আমাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে৷ তাদের লক্ষ্যই হলো যেকোন মূল্যে আমাদের দোকান নিবে। এক ভাগনেকে বেধড়ক মারধর করা হলেও মামলা করতে পারিনি ভয় ও আতঙ্কে। কারন তারা থানার মধ্যেও আমাদেরকে ওসির সামনে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে নিহত দুরুল হোদার ভাতিজা রানাউল ইসলাম শাহনাজ বলেন, চাচার কাছে ২৭ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। যার কারনে দোকানঘরে তালা দিয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই পুলিশ-আর্মি নিয়ে এসে তালা ভেঙে দোকানে প্রবেশ করেছে আমার চাচি ও তার লোকজন। তবে তাদেরকে কোন ধরনের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়নি। পাওনা টাকার কোন প্রমাণ রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, এর কোন ডকুমেন্টস নেই বলে জানান তিনি।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া জানান, বর্তমানে নিহত দুরুল হোদার স্ত্রীর দখলে রয়েছে নিরব টেলিকম ও নাফিস টেলিকমের দোকান। তবে এনিয়ে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত থানায় কোন মামলা দায়ের হয়নি।