নেত্রকোনার হাওড়বাসী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত , খালিয়াজুড়ী হাসপাতালের করুণ দশা

 

সৈয়দ সময় , নেত্রকোনা :

নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ী উপজেলার লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর একমাত্র সেবা প্রতিষ্ঠান
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চলছে কার্যত একজন ডাক্তার দিয়ে। চিকিৎসা বঞ্চিত ভূক্তভোগী কয়েকজন রোগী বলেন , খালিয়াজু্রী হাসপাতালে কোন ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যায় না। গরীব অসহায় জনসাধারণ নূন্যতম স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জানা গেছে ,৩১ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি এই
হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা দিতে জুনিয়র কনসালট্যান্টসহ ডাক্তারের ০৮ টি পদের মধ্যে ০৩ টি পদ শূন্য রয়েছে, বাকি ০৫ টি পদের বিপরীতে পোস্টিং থাকলেও এদের মধ্যে ০৩ জন ডাক্তারই অন্যান্য হাসপাতালে প্রেষণে নিয়োজিত রয়েছেন।

এ হিসেবে কাগজে কলমে ০২ জন ডাক্তারের নাম থাকলেও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রণব কুমার পাল
এ কর্মস্থলে অনুপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো।
তাই শুধুমাত্র একজন ডাক্তারের ওপরই
নির্ভর করছে এ হাওড় অঞ্চলের প্রায় এক
লাখ ছয় হাজার জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা।

খালিয়াজুড়ী সদরের কুড়িয়াহাটি গ্রামের হান্নান মিয়া , বোয়ালী গ্রামের ফরিদ , সুমনসহ
স্থানীয় অনেকেই বলেন , খালিয়াজুড়ী হাসপাতালে প্রায়ই কোন ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যায় না । নেই কোন উন্নত পরীক্ষার ব্যবস্থা।

সে ক্ষেত্রে জটিল ও জরুরী চিকিৎসা প্রত্যাশী রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। রোগীদের কষ্ট করে যেতে হয় নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে অথবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জানা গেছে , এ হাসপাতালে কোন গর্ভবতী মায়ের সিজারিয়ান
অপারেশন হয়নি কখনো। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারটি অচল রয়েছে ডাক্তার , যন্ত্রপাতি ও পরীক্ষা নিরীক্ষার অভাবে।
জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালটি
অপরিচ্ছন্ন থাকে বেশীরভাগ সময় ।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ রফিকুল ইসলাম জানান , খালিয়াজুড়ী হাসপাতালে মোট পদের সংখ্যা ২০৯ টি । এর মধ্যে ৫০ টি পদই শুন্য রয়েছে । হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছাড়া চিকিৎসা সেবা
দিতে ডাক্তারের পদ আছে ০৮ টি ,এর মধ্যে
জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি পদটি যুগ যুগ ধরে শূন্য । জুনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনী পদের বিপরীতে পোস্টিং থাকলেও তিনি নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়োজিত আছেন প্রেষণে ।

জুনিয়র কনসালট্যান্ট অবস্ পদের ডাক্তারও প্রেষণে
আছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । ডেন্টাল সার্জন পদের ডাক্তার প্রেষণে নিয়োজিত রয়েছেন মদন হাসপাতালে । আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদটি এক বছর ধরে শূন্য রয়েছে । শূন্য রয়েছে একটি
মেডিকেল অফিসারের পদও । নিয়জিত আছেন শুধু একজন মেডিকেল অফিসার ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন।

এ ছাড়া উপজেলার ০৫ টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ০৫ জন ডাক্তারের পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এ দিকে , জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন পদের বিপরীতে ডাক্তারের অনুপস্থিতির কারণে তাকে বিগত কয়েক মাসের মধ্যে তিন বার শো-কজ করা হয়েছে , এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার সৌনম বড়ুয়া। তবে ডাক্তার প্রণব কুমার পালের
দাবি , তিনি নিয়মের বাইরে কখনো এ কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন না। এ হাসপাতালে প্রায়ই ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যায় না এ কথাটিতে তিনি জোর আপত্তি জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন , এখানে ডাক্তার সংকট কাটাতে নেত্রকোনা জেলার সিভিল সার্জন মহোদয় প্রায় দুই মাস ধরে পার্শ্ববর্তী হাসপাতাল থেকে এনে দুইজন করে ডাক্তার
সংযুক্তি দিচ্ছেন প্রতি দুই সপ্তাহের জন্য ।

নেত্রকোনার সিভিল সার্জন অনুপম ভট্টাচার্য্য
জানিয়েছেন , এখানে ডাক্তার সংকট কাটাতে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ( প্রশাসন ) একাধিকবার জানানো হয়েছে । সংকট মেটাতে আশ্বাসও দিয়েছেন ।

Leave a Reply