অবৈধ সম্পদের পাহাড় ইউএনও’রহাসনাত রাব্বু কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি

যশোর জেলার শার্শা উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার রাজবংশীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। আর এই অভিযোগ তুলেছেন ইউএনও নয়নের খোদ নিজ গ্রামের বাড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা।

কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৮ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত উদিবাড়ি হালদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা নরোত্তম রাজবংশীর একমাত্র ছেলে নয়ন কুমার রাজবংশী। পরিবারের অভাব অনটনকে জয় করে এপর্যন্ত যারা পড়ালেখায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তাদের একজন তিনি। তবে কর্মজীবনে সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কতটুকু সৎ থাকতে পেরেছেন সেটা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত নয়ন কুমার রাজবংশী। সদ্য পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ২০১৩ সালে ৩৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি।

সেখানে নিজ যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখার পাশাপাশি মাহাবুব উল আলম হানিফের আস্থাভাজন হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছিলেন নয়ন। সহসায় সব ধাপ পেড়িয়ে হয়ে যান প্রশাসন ক্যাডার। এরপর চাকুরির ১০ বছরে সহকারী কমিশনার, সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট, এসি ল্যান্ড সহ নানা পদে দায়িত্ব পালন শেষে ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর যশোর জেলার শার্শা উপজেলা পরিষদের নির্বাহী অফিসার হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।
একসময় ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নয়ন বিসিএস পরীক্ষায় প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হওয়ার পর হঠাৎই আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের সন্ধান পান। হানিফ সাহেব নামক আশ্চর্য প্রদীপের দেখা পাওয়ার পর চাকুরি জীবনের ১১ বছরে হানিফ সাহেবকে কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বানিয়ে নিজেও বনে যান কোটিপতি। নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন কয়েক কোটি টাকার পাহাড় সম সম্পদ। নয়ন কুমার রাজবংশীর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলা শহর সংলগ্ন উদিবাড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরাই তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে ধরেছেন।

উদিবাড়ি হালদার পাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জহুরুল হক বিপু জানিয়েছেন, নয়নের রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ। উদিবাড়ি হালদার পাড়ায় ২০ কাটা জমির উপর ২ কোটি টাকা খরচ করে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। এছাড়া কুষ্টিয়া সদর উপজেলা সংলগ্ন ইন্দিরা মোড়ে ৩ তলা বিল্ডিং সহ ৬ কাঠা জমি রয়েছে তার। জমি সহ ঐ বাড়িটি তিনি শিল্পী হোটেলের মালিক নিতাই সাহার থেকে কিনেছেন। পৌর এলাকার মতি মিয়া রেলগেট সংলগ্ন ১৮ কাঠার কামার পুকুরের মালিকও নয়ন।

উদিবাড়ি হালদার পাড়া এলাকার বাসিন্দা সাকিব বলেছেন, নয়নের একমাত্র বোনের বিয়ে হয়েছিল বাংলাদেশে। তবে তার সে সংসার বেশি দিন টেকেনি। পরবর্তীতে তাকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিবাহ দেওয়া হয়। ভারতে বোনের স্বামীকে বিলাসবহুল বাড়ি করে দেওয়া সহ কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেয় নয়ন রাজবংশী।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত নয়ন কুমার রাজবংশী। সদ্য পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ২০১৩ সালে ৩৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি।

জয়নাল নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, নয়নের বাবা নরোত্তম রাজবংশী রাস্তার পাশে বসে ফল বিক্রি করতো। নরোত্তমের জুয়া খেলার প্রতি চরম আকর্ষণ ছিল। জুয়া খেলতে খেলতে নিঃস্ব হয়ে সামান্য ১০/১৫ টাকার বিনিময়ে জুয়ার বোর্ডের হিসাব লিখতো সে। তার স্ত্রী মানুষের বাসায় কষ্ট করে নয়নকে শিক্ষিত করে তোলে। তবে নয়ন শিক্ষিত হলেও সৎ মানুষ হতে পারিনি। চাকুরি পাওয়ার ১০ বছরের মধ্যে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। নয়নের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ও হানিফ সাহেবের ভয় দেখিয়ে তার বাবা নরোত্তমও বনে যান আরেক প্রভাবশালী। কুষ্টিয়া ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সেক্রটারী স্থানীয় কাউন্সিলর শাহজালালের সাথে একত্রিত হয়ে খাস জমি দখল, মালিকানা জমি দখল, টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের অন্যায় ও অপরাধের আপোষ মিমাংসা, থানায় দালালী সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নির্দ্বিধাই করে যেতেন তারা।
নয়নের আরেক প্রতিবেশী জিয়া জানিয়েছেন, নয়ন নিজের বাবা-মাকে ভূমিহীন দেখিয়ে তাদের নামে উদিবাড়ি কলোনিতে ১
বিঘা ৬ কাঠা ও ২ বিঘা ৯ কাঠার দুটি জমি (এনিমি সম্পত্তি) লিজ নিয়েছিলেন। যার একটি জমি দখলস্বত্বে বিক্রি করে বেশ কয়েকটি হতদরিদ্র পরিবারের থেকে ৩০ লক্ষ টাকার উপরে হাতিয়ে নিয়েছেন নয়ন ও তার বাবা নরোত্তম রাজবংশী। আর এই লিজ নেওয়া জমি বিক্রির কাজে সহযোগিতা করে মোটা অংকের টাকা কমিশন হিসেবে হাতিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর শাহজালাল।

নয়নের প্রতিবেশী খায়রুল জানিয়েছেন, নয়নের শশুর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায়। কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের সন্নিকটে টিএন্ডটি অফিসের কাছে সাড়ে ৮ কাঠা জমি কিনেছেন তিনি। এছাড়া মহেশপুর- কোটচাদপুর রোডে হাজী আইনুলের বাড়ির পাশে পুরাতন ২তলা বিল্ডিং সহ জমি ২ কোটি টাকায় কিনেছেন নয়ন। তিনি সাতক্ষীরাতেও ভাই ভান্তের নামে ১৩৫ বিঘা চিংড়ির ঘের ক্রয় করেছেন। তার একটি বিলাসবহুল প্রাইভেট গাড়িও রয়েছে।

এবিষয়ে অভিযুক্ত নয়ন কুমার রাজবংশী’র সাথে মুঠোফোনে কথা হয় প্রতিবেদকের। কথোপকথন কালে তার বিরুদ্ধে উঠা কয়েকটি অভিযোগ বলতে না বলতেই তিনি বলেন, আপনার খোঁজ নিয়ে দেখেন। একথার পর “ব্যস্ত আছি, পরে কথা হবে’ বলে ফোন রেখে দেন তিনি।

Leave a Reply