প্রায় ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেলস্টেনে দেড় বছরে রাজস্ব আয় শুন্য

মাসুদ রানা :-

পশ্চিমসঞ্চল রেলের পাবনায় উদ্বোধনের দেড় বছর আগে ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত স্টেশনে অদ্যাবধি এক ছটাক পণ্য পরিবাহিত বা যাত্রী থেকে ১টাকা আয় হয়নি।বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে নির্মিত এই স্টেশনটি কেবল রেলের ‘ওয়াগন ইয়ার্ড’ ও মালপত্র রাখার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। স্টেশনটি আদৌ কোন কাজে আসবে কিনা এ নিয়ে নানা সংশয় রয়েছে। নাকি পতিত আ.লীগ সরকারের দুর্নীতির একটি খাত, তা নিয়েও রয়েছে নানা সমালোচনা।


পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল ও ফুয়েল পরিবহনের জন্য ৩৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে রূপপুর রেলস্টেশন। স্টেশনটি ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি অতিথিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।


প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে রেল কর্তৃপক্ষ। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চলে স্টেশনটি নির্মাণের কর্মযজ্ঞ। প্রকল্পের আওতায় ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন হতে ঈশ্বরদী হয়ে রূপপুর পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার রেলপথ ও রূপপুর নামে একটি স্টেশন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ১৩টি লেভেল ক্রসিং, ৭টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য কম্পিউটার বেইজ, কালার লাইট ও সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়।


সংশ্লিষ্ট রেল কর্মকর্তারা উদ্বোধনের সময় বলেছিলেন, রূপপুর স্টেশন থেকে কোন যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে না। এটি শুধু রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালপত্র ও ভারী যন্ত্রপাতি আনা-নেয়ার জন্য ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি ঈশ্বরদী ইপিজেডের মালামালও এই স্টেশন থেকে পরিবহন করা হবে।
১৪ নভেম্বর বৃহশ্পতিবার সরেজমিন স্টেশনটি ও এর আশপাশ ঘুরে দেখা গেছে, পাকশীর পদ্মা নদীর কোলঘেঁষে এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পাশেই আধুনিক আঙ্গিকের রূপপুর স্টেশনটি ভূতড়ে জনশূন্য। সেখানে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অলসভাবে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। প্লাটফর্ম এলাকায় যত্রতত্র ময়লা ও আবর্জনার স্তুপ,তা থেকে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
টিকিট কাউন্টার, মালামল বুকিং রুম, গেস্ট রুম, ভিআইপি রুম, প্রথম শ্রেণির ওয়েটিং রুম, স্টেশনমাস্টার, সহকারী স্টেশনমাস্টারসহ সব কক্ষই তালাবদ্ধ।কাজও নাই কর্মকর্তা- কর্মচারীরাও নাই।


নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক সদস্য বলেন, রূপপুরের মালপত্র আনা-নেয়ার জন্য স্টেশন থেকে যে রাস্তা রয়েছে, সেটি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচ দিয়ে। এই দিক দিয়ে মালামাল আনা-নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্যই নাকি স্টেশনে কোন মালামাল আনা হয়না ।
স্থানীয়রা বলছেন, রূপপুর প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের জন্য ঈশ্বরদী বাইপাস থেকে যে রূপপুর পর্যন্ত বিপুল ব্যায়ে নির্মিত রেলপথটি আজ পর্যন্তও তালাবদ্ধ।রেলপথটি উদ্বোধনের ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও এই স্টেশনে কোন ট্রেন যাতায়াত করেনি, এর ফলে রেলের কোনো রাজস্ব আয়ও হয়নি। এটি আদৌ কোনো কাজে ব্যবহৃত হবে নাকি দুর্নীতির একটি খাত তা খতিয়ে দেখা উচিত।


পাকশি রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহ সুফী নূর মোহাম্মদ জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ ও ফুয়েল পরিবহনের জন্য ডুয়েল গেজ সম্পন্ন একটি রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কপথে যদি কোনো অরাজকতা, হরতাল-অবরোধের কারণে সেগুলো পরিবহনে বিলম্ব হয়, তবেই এই রেলপথের মাধ্যমে তা নিয়ে আসা হবে। মূলত এ কারণেই এই স্টেশনটি নির্মিত হয়েছে।

Leave a Reply