হাসনাত রাব্ব
কুষ্টিয়ায় মামলার এজাহারে ঢালাও আসামী করার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি চলছে। থানায় এজাহার জমা দিয়ে মামলায় আসামী করা হচ্ছে জানিয়ে ফোন দিয়ে টাকা টাকা হচ্ছে সাধারন মানুষের কাছে। এমনকি টাকা না দিলে আসামী করে যৌথ বাহিনী দিয়ে গ্রেফতার করানোর হুমকিও দেওয়া হচ্ছে ফোনে।
কুষ্টিয়া মডেল থানায় গত ৮ অক্টোবর শহরের থানাপাড়া এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে মাহামুদুল হাসান রোমন বাদী হয়ে ৬০ জনকে আসামী করে একটি অভিযোগ প্রস্তুত করেন। সেটি থানায় জমা না দিয়ে বিভিন্ন লোকজনের মোবাইলে পাঠাচ্ছেন। তবে সেটি এখানো থানায় এন্ট্রি হয়নি। এই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতারা ছাড়াও শিক্ষক, বেসরকারি চাকুরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের নাম দেওয়া হয়েছে আসামী হিসেবে।
এর মধ্যে এ মামলায় কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া এলাকার বাসিন্দা আনন্দ কুমার পালের দুই ছেলে পলাশ কুমার পাল ও মিলন কুমার পালকে ৪০ ও ৪১ নম্বর আসামী করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকেল ৩টার দিকে পলাশ কুমারের মোবাইল নম্বরে একটি বাংলালিংক (০১৯১১০৩৩৬৫৩) নম্বর থেকে ফোন করা হয়। তাদের নামে মামলা হচ্ছে জানিয়ে ফোন করেন ওই ব্যক্তি। পরে পলাশ কুমার ওই ব্যক্তির সাথে রিং দিয়ে তার এক বড় ভাইকে বিষয়টি জানায়। পরে পলাশ কুমার ওই নম্বরে রিং দিয়ে সহযোগিতা চান। দুইজনের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। প্রায় ২০ মিনিট কথা হয় দুইজনের মধ্যে। পলাশ: হ্যালো ভাইঅ জ্ঞাত ব্যাক্তি: কে? পলাশ: এই যে আমার বাংলালিংক নম্বরে ফোন দিলেন না, আমি পলাশ বলছি। অজ্ঞাত ব্যাক্তি: আপনারা দুই ভাই কাউন্সিলের ডান হাত-বাম হাত ছিলেন। এলাকায় বহু তান্ডব চালিয়েছেন দুই ভাই, বহু কথা গল্পই শুনলাম আপনাদের নামে। দলপার্টি ক্ষমতায় থাকলে হয়ে যায়। কমিশনারের পরিপ্রেক্ষিতে আপনাদের নামে মামলা দিয়েছি।
পলাশ: যাই হোক ভাই এটার সমাধান কি? অজ্ঞাত ব্যাক্তি: রাতের মধ্যে আসলে হয়ে যাবে, মনে করেন বাদীর সাথে আমার সম্পর্ক ভালো। মেলা জনারই মনে করেন.. ই করে দিলাম। মামলা খুব খারাপ জিনিস, আর এই মামলা যৌথ বাহিনী দিয়ে ধরাচ্ছে মনে করেন আরো খারাপ।
পলাশ: ও আচ্ছা, এখন কি করার আছে? অজ্ঞাত ব্যক্তি: এখন আপনি, আমাদের গ্রামের বাড়ি ভেড়ামারায়। পলাশ: আচ্ছা অজ্ঞাত ব্যক্তি: গ্রামের বাড়ি ভেড়ামারায়, এক ছেলে ভেড়ামারায় থাকে। তার কাছ থেকে আপনার মেলা গল্প শুনলাম। অনেকের হাত কেটে নিয়েছে, মামলায় দুই ভাইয়ের নামই দি। এভাবেই নাম দেওয়া। পলাশ: হু হু অজ্ঞাত ব্যক্তি: এখন অপশন আছে, মনে করেন ১১টার আগ পর্যন্ত যে কারো পাঠান, মনে করেন মামলা এন্ট্রি হবে রাত ১১টার আগে আসতে হবে। পলাশ: ভাই যা করতে হবে তাহলে এখনই করতে হবে? কি করা যায় বলেন?
অজ্ঞাত ব্যক্তি: আপনারা আমার সাথে দেখা করেন, দুই ভাই আসামী আছেন তো। বাদীর সাথে আমার ভালো সম্পর্ক, সাইডে ডেকে কথা বলে ঠিক করে দেব। বাদী আপনাকেও চেনেও না, বিভিন্নভাবে একজনের সাথে শত্রুতাবশত আরেকজন আসামী করে দিয়েছে। এভাবে নাম ঢুকাইছে।
পলাশ: ও আচ্ছা, তাহলে এখন দেখা করবো কোথায়?অজ্ঞাত ব্যক্তি: ভেড়ামারাতেও দেখা করতে পারেন, যেখানে ইচ্ছা, বহুল বাড়িয়া সেন্টারি কাচারি না হলে ত্রিমোহনী। আপনি যেখান বলবেন, সেখানেই দেখা করবো। পলাশ: আমিতো ব্যাস্ত যেতে পারব না, আমার বড় ভাইকে পাঠাচ্ছি। অজ্ঞাত: আপনার ভাই বা যে কোন একজনকে পাঠালেই হবে। পলাশ: যেখানে সহজ হয় সেখানে পাঠাচ্ছি, কোথায় পাঠাব বলেন, বড় ভাইকে ফোন দিয়ে বলে দি? অজ্ঞাত ব্যক্তি: আমি এখন আছি মিরপুর পলাশ: ও তো কুষ্টিয়া আছে
অজ্ঞাত ব্যক্তি: তাহলে আমি বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করে লিচ্ছি (নিচ্ছি)। আমার দিইয়ে ফোন দিতে বলেন। খুব দ্রুত, রাত ১১টার মধ্যে। পলাশ: বুঝেছি ভাইজান, টাকা পয়সা কত লাগবে?
অজ্ঞাত ব্যক্তি: টাকা পয়সা, মেলাজনতো মেলা রকমভাবে করছে। একটু আগেও একজন আইছিলো। আমার নম্বর দিয়েই ফোন দেওয়া হয়েছিল। পরে আমিই বাদির কাছে পাঠা দিলাম। পরে ওই লোক আইসি আমাকে ধরেছে, ভাই আপনি আইসেন, ঠিক আছে মানে, আপনি আসলে আপনার সাখে ঠিক করতাম। ও বাদীর কাছে একা কনফিউজ মনে করছে। তাহলে ওয়েট করেন আমি আসছি।
পলাশ: তাহলে এখন কেমন কি করতে হবে? অজ্ঞাত ব্যক্তি। কেডা কি দিচ্ছে তা আমি জানি না, ও পরে দুই দেছে মনে করেন যে একজন দিছে ৩০ হাজার টাকা, আরেকজনের নামটাম বেশি সে দিছে ৫০ হাজার টাকা, এরকম, আরেকজন দিছে খালি ২০ হাজার টাকা বুঝলেন। মানে ওরা রানিং এর যে গুলো পাচ্ছে নিয়ে নিয়ে (টাকা) নাম কাটা দিচ্ছে। আবার অনেকেই বলছে এর বেশি দিতে পারব না টাকা নেই, প্রয়োজনে মামলা দিয়ে ধরা দেন এমনও বলছে। অনেকেই স্যারেন্ডার করছে, বলছে নামটা কাটা দেন, দলপাটি ক্ষমতায় নেই, বাইরে বাইরে আছি। ঠিক আছে এইভাবে করে দিলাম। এইভাবে কথা বললে হবে আমার ধারনা, কারন যে বাদী তার হয়ে কাজ করি আমি। মেলা দিন ধরে তারে কাজ করি, এই জন্য আমার নম্বর দিয়ে ফোন দেওয়ায়ছে। তারা সরাসরি ফেস হচ্ছে না। পলাশ: যে বাদী হয়ছে উনার বাসা কোথায়, কুষ্টিয়াতেই ?
অজ্ঞাত ব্যক্তি: আপনার বাড়ি আশে পাশেই, কুষ্টিয়ারই। মনে করেন এতদিন এলাকায় কেউ ছিল না, ঝড়ে জঙ্গলে ছিল। ঢাকায় বিভিন্নভাবে ছিল, সবতো আইছে। আর আওয়ামী লীগের লোকজন মনে করেন ঢাকা ভরেছে। আর ঢাকার লোকসব এলাকায়। বিষয়গুলি এ রকম। এখনতো আওয়ামী লীগের লোকের সব ঢাকায় গিয়ে লোড হয়েছে। আর ঢাকার বিএনপি নেতারা সব এখন এলাকায়। বিষয় এখন উল্টা হইয়া গেছে। শেখ হাসিনা কিন্তু নিষেধ করছে, আওয়ামী লীগকে মুভ করতি। মুভ করতে বললেই ঢাকা ঘিইরি ফেলবে। ঢাকা কিন্তু লোড।পলাশ: যায় হোক ঠিক আছে, আমি আপনার সাথে যোগাযোগ করাচ্ছি, বড় ভাই ঠিক আছে ভাই। অজ্ঞাত ব্যাক্তি: আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ভাই, ফোন করতে বলেন দ্রুত। পলাশ: ঠিক আছে ভাই।
এদিকে মামলায় আসামী করার নামে টাকা চাওয়ার বিষয়ে জানতে ওই নম্বরে ফোন দিলে তিনি রিভিস না করে কল কেটে দেন। পরে ওই ব্যক্তির ফোন দিয়ে ঠিকানা বের করা হয়। সেখানে চাঁদা চাওয়া ব্যক্তির আইডি কার্ডে নাম সাহাবুল ইসলাম। পিতার নাম আব্দুস সামাদ। বাড়ি ভেড়ামারা উপজেলার বামনপাড়া এলাকায়। পরে সাহাবুল ইসলাম কুষ্টিয়া বাড়ি সাদ্দাম নামের একজনের মোবাইল নম্বর দিয়ে কথা বলতে বলেন। সেই সব জানে বলেও দাবি করে সে।
মামলা করার বিষয়ে বাদী মাহামুদুল হাসান রোমানের সাথে কথা মোবাইল রিং দিলেও তিনিও ধরেননি। মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহাফুজুল হক চৌধুরী বলেন,‘ মাহামুদুল হাসান রোমান নামে কেউ বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দেয়নি। এ মামলা নিয়ে আমার কিছু জানা নেই।’
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছু ব্যক্তি মামলা আসামী করার নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি করছে। নিরীহ লোকজনকে আসামী করার নামে তাদের ফোন দিয়ে টাকা দাবি করছে। এভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। যা দু:খজনক। আমরা থানার ওসি ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছি।