স্টাফ রিপোর্টার
কুড়িগ্রামে প্রতারণার মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে সরকারি রাজস্ব খাতের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ আগে এই মামলা হলেও কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি। ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। ডিসি বলছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্ত দুই নেতা হলেন, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও বেলগাছা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জুলহক সরকার বিদ্যুৎ।
কুড়িগ্রাম সদর থানায় গেল ৬ ফেব্রুয়ারি চেক জালিয়াতির মামলা করেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদের হিসাব সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আমিনুল ইসলাম কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আইভি ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী। সরকারি একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ পান তিনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউএনও স্বাক্ষরিত একটি ২৫ হাজার টাকার চেক তার হাতে হস্তান্তর করা হয়। তিনি চেকটিতে ২৫ হাজারের আগে ৪ লাখ বসিয়ে মোট ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য জনতা ব্যাংক লিমিটেড ত্রিমোহনী বাজার শাখায় জুলহক সরকারকে পাঠান। চেকটি যাচাই করে সন্দেহ হলে উল্লেখিত অ্যাকাউন্টে জমা না করে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপক মিতালি রানী ।
উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে, তাদের দুইজনের এরকম আরও অপকর্মের প্রমাণ পায়। এ বিষয়ে আমিনুল ইসলাম ও জুলহক সরকারকে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বাতেন বলেন, ‘১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা হওয়ার কথা শুনেছি। তবে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মমিনুল ইসলাম জানান, ‘বেলগাছা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক জুলহক সরকার বিদ্যুতের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা হওয়ার খবর এই মাত্র আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, ‘শুনেছি অভিযুক্ত আসামিরা আত্মসাৎ করা টাকা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ফেরত দিয়েছে। তারপরেও অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অপরাধ করলে শাস্তি হবে, সে যেই হোক।’
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি। একটি মামলা হয়েছে, মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুসফিকুল আলম হালিম বলেন, ‘প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে থানায় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক একটি মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কারণে প্রতারকরা বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারেনি। তাদের বিরুদ্ধে আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ ব্যাপারে কথা হলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘প্রতারণার মাধ্যমে রাজস্ব খাতের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।