জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে কৃষি বিভাগের উৎসাহে বেড়েছে সরিষার চাষ

জুয়েল শেখ জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি

জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে চলতি সরিষা চাষ মৌসুমে সরকারি প্রণোদনা ও স্থানীয় উপজেলা কৃষি বিভাগের উৎসাহে বেড়েছে সরিষার আবাদ। গত বছরের তুলনায় কৃষকেরা আরো বেশি সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছে। আবহাওয়া ভালো হলে ফলন ভালো হবে এমন আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে এখন চোখ জুড়ানো হলুদ ফুলের সমারোহ। সেই সাথে বাতাসে ভাসছে মো মো মিষ্টি ঝাঁঝাঁলো ফুলের ঘ্রাণ। সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মৌসুমে উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপজেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষদদের মাঝে সরিষা চাষে সার, বীজ প্রণোদনা দেয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর সরিষা চাষ অনেক বেড়েছে।

ইতিপূর্বে আমন ধান কাটার পর যে সব জমি পড়ে থাকতো সে সব অনেক জমি এখন সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় আনন্দের হাসি হাসছে এলাকার কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভায় ৮ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে সরিষা চাষ করা হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় ২ হাজার ৪০৫ হেক্টর বেশী। আর চলতি মৌসুমে সরিষা চাষে প্রণোদনার আওতায় উপজেলার ৬ হাজার ৮শ কৃষককে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে।

সরিষার ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত উপজেলার লাটপাড়া গ্রামের মোকছেদ আলী বলেন, তিনি এবার প্রায় ৪ বিঘা জমিতে বারী ১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে বিঘা প্রতি ৫/৬ হাজার টাকা। প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ না হলে বিঘা প্রতি ৮/৯ মন ফলনের আশা করছেন। ধুরইল গ্রামের গ্রামে ইসমাইল হোসেন দু বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আমন ধান কাটার পর জমি গুলো এমনিতেই পড়ে থাকতো। উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ ও সরকারী প্রণোদনার সার ও বীজ পেয়ে সরিষা চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়েছি।

বাজারে ভাল দাম পেলে ৩৫/৪০ হাজার টাকা লাভ হবে। একই কথা বলেন, মঠপাড়া গ্রামের কৃষক মন্টু পাহান। তিনিও দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তিনি সরিষা বিক্রির টাকায় ইরি বোরো চাষাবাদ করার আশা করেছেন। কয়েক বছর আগেও তাদের যে জমি পড়ে থাকতো বর্তমানে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপ সহকারীদের সহযোগিতায় ও উৎসাহে সে সব জমিতে তারা সরিষা চাষ করেছেন। এটি একটি লাভ জনক ফসল হওয়াও এ ফসল চাষে ঝুঁকে পড়ার অন্যতম কারন।

তবে অনেকে বলেন,ক্ষেতে তেমন রোগ বালাই না থাকলেও চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারনে ফলনে প্রভাব পড়তে পারে। পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, বারী-১৪ জাতের সরিষার ফলন বেশী, সময়ও লাগে কম। এতে করে এসব জমিতে সরিষা উঠিয়ে সহজেই বোরো চাষ করা যায়। আর তখন সারও কম প্রযোগ করতে হয়। এ ফসল আবাদের জন্য প্রথমে জমি হালকা ভাবে চাষ করে তাতে বীজ বপন করতে হয়। প্রয়োজনে দু-তিন বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। তিনি আরো বলেন, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া কিছুটা শুষ্ক থাকলেও পরে অনুকুল হওয়ায়ও যথাযথ পরিচর্যার কারণে এবার সরিষার ভাল ফলন পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তিনি বলেন, অনেকেই এমনিতেই সরিষাতে ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করছে। এটা ঠিক না তবে জমিতে তেমন কিছু দেখা গেলে ফুল ঝরে যাওয়ার পর অনুমোদিত মাত্রায় বালাই নাশক প্রয়োগ করতে হবে। বর্তমানে সরকারের উন্নয়ন কর্মসুচির অংশ হিসাবে দেশে ভোজ্য তেলের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে আমরা কৃষকদের সরিষা চাষে নিয়মিত পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করছি।

Leave a Reply