হৃদয় রায়হান কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার মিরপুরে ‘টপ লেডি’ জাতের পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী কৃষক জামিরুল। ‘আপনারা গাছে পেঁপে দেখছেন, কিন্তু আমি দেখছি টাকা। আমার মনে হচ্ছে গাছে টাকা ঝুলছে।’ এভাবেই খুশি মনে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার মিরপুরে ‘টপ লেডি’ জাতের পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী কৃষক জামিরুল।
তার গাছে এক একটি পেঁপে মানে ১০ থেকে ২০ টাকা করে দাম।
রেড লেডি জাতটি তাইওয়ানের উচ্চ ফলনশীল বামন প্রজাতির পেঁপের জাত যা বাংলাদেরশের আবহওয়াতে চাষ উপযোগী। তিনি এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন। এরমধ্যে তিনি পেঁপে বিক্রি শুরু করেছেন। জমি থেকেই কাঁচা পেঁপে পাইকারি ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করে বেশ খুশি জামিরুল ইসলাম।
এই কৃষকের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়ায়। জামিরুল প্রথম পেঁপে চাষেই দুই লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন। তিনি মাত্র ৩৫ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন এবং দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বলিদাপাড়ায় তার বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত পেঁপে ধরেছে। ছোট-বড়-মাঝারি সাইজের পেঁপের পাশাপাশি গাছে বেশ ফুলও রয়েছে। এক একটি গাছে এ মৌসুমে প্রায় এক মণ করে পেঁপে সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করেন জামিরুল ইসলাম।
ছোটবেলা থেকেই কৃষির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন জামিরুল ইসলাম। ধান চাষের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে তামাকের চাষ করেন তিনি। তামাকে পরিশ্রম এবং বিক্রির ক্ষেত্রে হয়রানির কারণে চায়ের দোকান খুলেছেন।
তিনি জানান, কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে নিরাপদ উপায়ে উচ্চমূল্যের সবজি চাষের ওপরে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিনদিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাদের সহায়তায় পেঁপের চাষ করেছেন। তামাকের পরিবর্তে পেঁপে চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন।
তিনি বলেন, কীভাবে পেঁপের চাষ করতে হবে, কখন পরিচর্যা করতে হবে-সবকিছু হাতে কলমে শিখিয়ে দিয়েছে কৃষি অফিসের লোকজন। আমি নিজেই ওয়ানটাইম চায়ের কাপে পেঁপের চারা উৎপাদন করে রোপণ করেছি। জমি চাষাবাদ ও পরিচর্যা করেছি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে ২০ শতক জমির জন্য সার, বীজ, পরিচর্যার খরচ দিয়েছে। বাকিটুকু নিজে খরচ করেছি।
জামিরুরেল জমিতে ৪০০ পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রতি গাছে গড়ে এক মণ করে পেঁপে পাওয়া যাবে। এটা বিক্রির জন্য বাজারেও নিতে হচ্ছে না। ব্যাপারীরা এসে বাগান থেকেই পেঁপে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আশা করছেন এই মৌসুমেই দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন। ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ করে তিনি এই আবাদ করেছিলেন।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুল ইসলাম বলেন, আমরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক উচ্চমূল্য সবজি ও ফল চাষে পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষক জামিরুল ইসলামকেও পেঁপে চাষে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। নিয়মিত তার বাগান পরিদর্শন করে ব্যবস্থাপনা প্রদান করা হচ্ছে। পেঁপে চাষটা বেশ লাভজনক হওয়ায় এরমধ্যে আরো ১০ বিঘা জমিতে পেঁপের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে ওই এলাকায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পেঁপে একটি পুষ্টিকর এবং উচ্চমূল্য সবজি। এটি বেশ লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বর্তমানে পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে। যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় পেঁপে চাষে কৃষকদের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছি। কৃষক জামিরুল ইসলামের পেঁপে বাগান দেখে এলাকার আরো কৃষক পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।