রাজু আহমেদ খুলনা ঢীফ
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে আউটসোর্সিং এর নামে প্রতারণা করে আসছে মাছরাঙ্গা সিকিউরিটি সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক হোসেন হেমায়েত নামে একজন ঠিকাদার এবং এই প্রতারণায় তাকে সহযোগিতা করছে খুলনা মেডিকেল এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন।
এমনই একটি তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাটি অনুসন্ধানে নামে সবার কথা চ্যানেলের একটি অনুসন্ধানী সাংবাদিক দল।
খুলনা মেডিকেলে আউটসোর্সিং এ কর্মরত কিছু কর্মচারীদের সাথে কথা বলতেই একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে ফারুক ও ইখতিয়ার এর সকল দুর্নীতির তথ্য।পাওয়া যায় তাদের প্রতারণার শিকার একাধিক ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগীরা জানায় দীর্ঘদিন যাবত এই ফারুক হোসেন হেমায়েত আউটসোর্সিং এর চাকরিকে সরকারি চাকরি দেখিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। কাউকে চাকরি দিয়েছেন আবার কাউকে চাকরি দেন নাই। চাকুরীতে যোগদানের পরেই তারা বুঝতে পেরেছেন যে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছে।
সরকারি চাকরির কথা বলে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতিটি নিয়োগের বিনিময়ে।
এবং এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা
ইখতিয়ার উদ্দিন।
উক্ত বিষয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন এর সাক্ষাৎকার নিতে গেলে দেখা যায় তার অফিস বন্ধ ঝুলছে বড় একটি তালা। তার মোবাইল ফোন ও বন্ধ করে রেখেছেন তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় একাধিকবার চেষ্টা করার পরেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়েই তিনি তার অফিস সহায়ক সাজ্জাদ কে নিয়ে আগেই সেখান থেকে সরে পড়েছেন।
বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে এই ফারুকের সীমাহীন দুর্নীতির চিত্র। দুর্নীতি দমন কমিশন সহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে খুলনা মেডিকেলের আউটসোর্সিং এর কর্মচারীদের গণস্বাক্ষরকৃত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে এই ফারুকের বিরুদ্ধে।
তবুও কখনোই এই দুর্নীতির বরপ্রাপ্ত ফারুকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বরং এখনো সে নির্দ্বিধায় তার এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
মাসের পরে মাস বেতন পাচ্ছে না কর্মীরা
বেতন পেলেও সেই প্রাপ্ত বেতনের অর্ধেক টাকা দিয়ে দিতে হচ্ছে ঠিকাদার ফারুক হেমায়েত কে।
কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে, অর্থ ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে খুলনা মেডিকেলে টিকিয়ে রেখেছে তার একক আধিপত্য।
দীর্ঘ ১৫ বছর আওয়ামী সরকার দলীয় শীর্ষ পদধারী নেতাদের সাথে ছিল এই ফারুক এর নিবিড় সম্পর্ক।
গত জাতীয় নির্বাচনে নড়াইলের একটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও ছিলেন এই ফারুক।
কিন্তু গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পরে রাতারাতি লেবাজ পাল্টে ফেলেছেন তিনি।
এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কখনো বিএনপি এর কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময়ের ছবি পোস্ট করছেন, আবার কখনো প্রধান উপদেষ্টার সাথে ছবি তুলে পোস্ট করছেন তার ব্যক্তিগত প্রোফাইলে।
অপরদিকে খুলনা মেডিকেলে এই ফারুকের দুর্নীতির সাম্রাজ্য কে টিকিয়ে রাখতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন।
তার বিরুদ্ধে একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ আনেন যে তিনি এখন ঠিকাদার ফারুকের হয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আউটসোর্সিং এর কর্মী নিয়োগ দিচ্ছেন এবং এ সকল নিয়োগ ও টাকা তিনি তার অফিস সহায়ক সাজ্জাদ এর মাধ্যমে নিচ্ছেন। এবং কিছুদিন আগে
কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই তার অফিস সহায়ক সাজ্জাদ এর স্ত্রীকে আউটসোর্সিং এ খুলনা মেডিকেলে চাকুরীও দিয়েছেন তিনি।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন এর বিরুদ্ধে এমনও অভিযোগ আনা হয়েছে যে খুলনা মেডিকেলে আউটসোর্সিং এ নিয়োগের ফর্ম ফিলাপের কথা বলে প্রতি কর্মীর কাছ থেকে জন প্রতি ৩০০ করে টাকা নিয়েছেন তিনি এবং তাদের বলেছেন তার মাধ্যমেই এই ফর্মটি পূরণ করতে হবে অন্য কোথাও থেকে করলে সেই ফর্মটি গ্রহণযোগ্য হবে না।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হওয়া এ সকল দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের
উপ- পরিচালক মোঃ আখতারুজ্জামান এর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন এর বিরুদ্ধে তার কাছে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ এসেছে এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন তার এসব অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন এবং এ ধরনের অপকর্মের সাথে আগামীতে জড়িত না থাকার অঙ্গীকার করেছেন।
উপ -পরিচালক আরো বলেন এই দুর্নীতি গ্রস্ত ঠিকাদার ফারুক হেমায়েত দীর্ঘদিন যাবত অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে। কর্মীদের কে বেতন তো দেন ই না,
মাঝে মাঝে চাপে পড়ে কর্মীদের বেতন দিলেও সেই বেতনের অর্ধেক টাকা আবার টেবিলের নিচ থেকে নিয়ে নেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি ও গঠন করা হয়েছে । অতি দ্রুত তদন্ত শেষ করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।