মো কাওসার মিয়া দিপু বগুড়া জেলা প্রতিনিধি
বগুড়ার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে নারী মাফিয়াদের ভয়ংকর মাদক সিন্ডিকেট। এসব নারীদের মাদকের স্পটে ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বেচাকেনা হয়। এদের অনেকে মাঝে-মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও বেশিরভাগ মাদক সম্রাজ্ঞীরাই থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কোনো কোনো এলাকায় এসব নারী মাফিয়াদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাতে গিয়ে একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে পুলিশ সদস্যরা। এমনকি সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মাদক কারবারিদের হামলা থেকে রেহাই পান না সাংবাদিকরাও। অভিযোগ রয়েছে, এসব মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলে উল্টো পুলিশের বিরুদ্ধেই সংশ্লিষ্ট থানার ওসি সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে তারা। যদিও অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেণির অসৎ পুলিশ সদস্যরা কমিশনের বিনিময়ে মাদক কারবারিদের সহযোগিতা করেন। এমনই এক মাদক সম্রাজ্ঞীর সন্ধান পাওয়া গেছে। বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড খেরুয়া পাড়া গ্রামে মাদক সম্রাজ্ঞী শারমিন আক্তার মায়ার বাসা। বাবা সাবু মাঝি সৈয়দপুর ইউনিয়নের সামনে খুচরা মাছ বিক্রয় করে সংসার চালান। মা অন্যের চালকল মিলে কাজ করেন। অভিযোগ রয়েছে, বাবা মার প্রত্যেক্ষ মদদে মাদক কেনা বেচা ও দেহ ব্যবসার টাকা দিয়েই চলে শারমিন আক্তার মায়ার সংসার। মাদক সম্রাজ্ঞীর নাম শারমিন আক্তার মায়া হলেও কোথাও কোথাও এ নিজেকে কণা,পুষ্পিতা, সঞ্চিতা, অধরা, আনন্দী, সোমা, সাদিয়া সহ নানা নাম ব্যবহার করে থাকে।এছাড়াও সে নিজেকে বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ, ডিবি ও র্যােবের সোর্স হিসেবে নিজেকে দাবি করে। এই বিষয়ে আমরা তার সাথে যোগাযোগ করলে সত্যতা স্বীকার করে শারমীন আক্তার মায়া। এই বিষয়ে মায়ার বাবা মো: সাবু মাঝির সাথে কথা বললে প্রথমে তিনি মায়ার বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন।
আমরা শারমিন আক্তার মায়ার পরিবারের বিষয়ে খোজ নিয়ে জানতে পারি মায়ার বাবা মো: সাবু মাঝির নামে শিবগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মাদকের একটি মামলা চলমান রয়েছে। এ্ই ঘটনার আরো গভীরে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে শারমিন আক্তার মায়ার নেটওয়ার্ক বাহিনীর সদস্যদের নাম। যাদের সহায়তায় মাদকের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে শারমিন আক্তার মায়া। শারমিন আক্তার মায়ার নেটওয়ার্ক বাহিনীর অন্যতম মোকামতলা ডাকুমারা গ্রামের বাসিন্দা আলো, ফয়সাল, আজিম, শহিদুল ইসলাম, স্বর্ণকার রহিম, রিয়াদ, রিয়া, নিশি, শারমিন, উজ্জল, সনি, মোজাহারুন, মিনারুল ইসলাম, তামান্না সহ আরও অনেকের নাম রয়েছে। এলাকার লোকজন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মাদক সম্রাজ্ঞী শারমিন আক্তার মায়া সহ তার পরিবার ও এর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোড় দাবি জানান। এছাড়াও এলাকার লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন সৈয়দপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল মোত্তালিব ও তার ছেলে মো: মামুন হোসেনের সহায়তায় এই ধরনের অপরাধ মূলক কাজ করার বারবার সাহস পায় শারমিন আক্তার মায়া। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে মায়ার যেকোন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে চেয়ারম্যানের ছেলে মামুন প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করে থাকে। এই বিষয়ে চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, বিষয়টা আমার জানা নেই, তবে খবর নিব। যদি ঘটনা সত্যতা খুঁজে পাই তবে চেষ্টা করব যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার। শারমিন আক্তার মায়ার মাদক সেবন ও বিক্রির স্পটগুলো হলো- শারমিন আক্তার মায়ার নিজ বাড়িতে, হাকির মোড়ে অবস্থিত মায়ার বান্ধবী রূপার বাসায়, উপশহরে অবস্থিত উজ্জ্বল এর বাসা, টিএমএসএস এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান- মমো ইন ইকো পার্ক, সেউজগাড়িতে অবস্থিত জামতলা প্রাইমারি স্কুলের পাশে বসে মাদক সেবনের আসর । এই বিষয়ে মোকামতলা পুলিশ ফাড়ির পুলিশ পরিদর্শক মো: আশিক ইকবাল বলেন, আমরা সবসময় মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এবং প্রকৃত অপরাধীদের ছাড় দেইনা। কেউ উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের মাধ্যমে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিব। এই বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর বগুড়া জেলার উপ-পরিচালক মো: রাজিউর রহমান বলেন মাদক সেবন, পরিবহন এবং বিক্রি সমান অপরাধ। এই অপরাধমূলক কাজ যে করুক না কেন আমরা যদি উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ পাই তাহলে অবশ্যব্যবস্থা গ্রহণ করব কারণ মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি সেবন বা বিক্রি বা পরিবহন যেই করুক না কেন তাকে আইনে আওতায় নিয়ে এসে আইনের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা প্রদান করা হবে।।