গোলাম সারোয়ার :
আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরপরই ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (বিজিবি) বিদ্রোহের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। ‘ওই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তার সঠিক তথ্য দেশের মানুষের জানার অধিকার আছে’, উল্লেখ করে তিনি দাবি করেন, ‘সঠিক তদন্ত হলে তার নিজের কোনও সম্পৃক্ততাও পাওয়া যাবে না।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড পেজ থেকে লাইভে এসে এমন দাবি করেন সোহেল তাজ। বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার সময় তিনি আমেরিকায় থাকলেও তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে মামলাটি পুনর্তদন্তের কথা জানানো হয়। এরই মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্য ও তদন্তকারী সেনা কর্মকর্তারা নানান বক্তব্য দিচ্ছেন।
বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মতিন। তিনি সেখানে বলেন, ‘আমি জেনারেল এরশাদের কাছ থেকে শুনেছি, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ খুনিদের বিদেশে চলে যেতে সহায়তা করেছেন। তিনিও কার কাছ থেকে যেন শুনেছেন।
আবদুল মতিনের এমন বক্তব্যের পরে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে ফেসবুক লাইভে আসার কথা উল্লেখ করে সোহেল তাজ বলেন, ‘এখানে তিনি (আবদুল মতিন) একজন প্রয়াত ব্যক্তির হিয়ার সেইড (শোনা কথা) নিয়ে জনসম্মুখে বর্ণনা করেছেন। এটা একেবারেই ঠিক না। এটা হচ্ছে একজন মানুষকে কোনও প্রমাণ ছাড়া কালিমা দেওয়া। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।
আমি এ সংবাদ সম্মেলনটা দেখেছি, তখন আশ্চর্য হয়েছি, স্তম্ভিত হয়েছি। এরকম একটা নিকৃষ্ট, জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমার নাম কেন একটি মহল বারবার জড়ানোর চেষ্টা করছে। এটার সঙ্গে আমাকে সংযুক্ত করছে কোনও প্রমাণ ছাড়া। এর মাধ্যমে আমাদের পরিবার ও আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা থেকে বিরত থাকবো।
বক্তব্য জনসম্মুখে এসে পরিষ্কার করার জন্য আবদুল মতিনের কাছে অনুরোধ করেন সোহেল তাজ। তিনি বলেন, ‘একজন নিরপরাধ, নির্দোষ মানুষকে মৃত ব্যক্তির কথার ভিত্তিতে, তিনি আবার আরেকজনের থেকে শুনেছেন, সেটা বলে দিলেন। এটার উদ্দেশ্যটা কী? কেন করলেন? আপনারা যে কাল্পনিক তথ্য উপস্থাপন করে যে ক্ষতি করা হয়েছে, তা পূরণে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত চান উল্লেখ করে সোহেল তাজ বলেন, ‘সঠিক ঘটনা যাতে উদ্ঘাটন হয়, সেটা আমিও চাই। আমি চাই, নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার যাতে ন্যয়বিচার পায়। সর্বোপরি বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে দেশের মানুষের জানার অধিকার আছে, সত্যটা যাতে উদ্ঘাটন হয়। সত্য বেরিয়ে আসলে— সেটি হবে আমার বড় ঢাল, আমি ভয় পাই না।
দেশের মানুষ সত্যটা জানতে চায় উল্লেখ করে সোহেল তাজ বলেন, ‘সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। এমন ঘটনা যাতে আর কখনও বাংলাদেশে না ঘটে, সে জন্য এটার সঠিক তদন্ত, সঠিক বিচার প্রয়োজন।’