টুটুল তালুকদার, গাজীপুর :
গাজীপুরের টঙ্গীতে সরকারি মালামাল চুরি ও পরে সেগুলো বিক্রির অভিযোগে পুলিশের একজন এসআইকে প্রত্যাহার এবং একজন ওসিকে বদলি করা হয়েছে। বিটিসিএল-এর একটি গোডাউন থেকে চুরি হওয়া মালামাল জব্দ করার পর তা বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের এই নৈতিক বিপর্যয়ের ঘটনায় প্রশাসনের অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, যা পুরো ঘটনার গভীরে অনুসন্ধানের দাবি তুলে ধরেছে। কীভাবে আইন রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এমন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলেন, তা জানতে চলছে তদন্ত।
গাজীপুরের টঙ্গীতে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) একটি গোডাউন থেকে চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের পর বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে টঙ্গী পূর্ব থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) আরিফ হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম মামুনুর রশীদকে বদলি করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-কমিশনার (অপরাধ, দক্ষিণ) আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং বিষয়টি আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে বিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭টার দিকে টঙ্গীর টিঅ্যান্ডটি বাজার এলাকায় বিটিসিএল-এর একটি গোডাউনে থাকা প্রায় ১০০০ কেজি লোহা-লক্কড় চোরচক্রের সদস্যরা একটি কাভার্ডভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছিল। স্থানীয়রা সন্দেহবশত চোরদের অনুসরণ করে এবং টিঅ্যান্ডটি স্কুল মাঠের পাশে মালামালসহ কাভার্ডভ্যান রেখে চোরেরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার এসআই আরিফ হোসেন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাভার্ডভ্যানটি জব্দ করেন।
কিন্তু এরপর ঘটনা এক অদ্ভুত মোড় নেয়। পুলিশি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রেকার ডেকে কাভার্ডভ্যানটি থানায় আনার পরিকল্পনা করা হলেও ওসি এস এম মামুনুর রশীদ এসআই আরিফকে নির্দেশ দেন, যেন ভ্যানের মালামাল বিক্রি করা হয়। পরবর্তীতে, সরকারি সম্পদ হিসেবে থাকা ওই লোহা-লক্কড় স্থানীয় একটি ভাঙারির দোকানে ৪৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়, এবং খালি ভ্যানটি থানায় নেওয়া হয়। এসআই আরিফ সেই রাতেই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে শুধু কাভার্ডভ্যান জব্দ করার কথা উল্লেখ করেন।
এমন গুরুতর অভিযোগ উঠলেও, ওসি মামুনুর রশীদ কোনোরূপ আইনি ব্যবস্থা নেননি এবং মালিক কিংবা চালকের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অভিযোগ দায়েরও করেননি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনা এতদিন প্রকাশ্যে না আসার মূল কারণ ছিল ওসির নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় নেওয়া গোপন পদক্ষেপ। চোরাই মালামাল ও কাভার্ডভ্যানের চালকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নেওয়া এবং ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অগোচরে রাখার চেষ্টা পুরো ঘটনার নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
বিটিসিএল-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ নুরুউল্লাহ জানান, তারা এই ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছেন এবং বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছেন। পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
নাগরিক সমাজের কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, এই ঘটনা আবারও আমাদের দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সরকারি মালামাল চুরি ও বিক্রির মতো একটি গুরুতর অপরাধের সঙ্গে পুলিশের জড়িত থাকার খবর সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করি। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পুলিশের অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অভিযান আরও জোরদার হওয়া প্রয়োজন।