মোঃ বিল্লাল হোসেন,শেরপুর থেকেঃ
শেরপুরে আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রনে স্টেকহোল্ডারদের সাথে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৪ ডিসেম্বর বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন এ সভাটির আয়োজন করে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোসা. হাফিজা জেসমিন-এর সভাপতিত্বে ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আরিফুল ইসলাম-এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে ক্যাব শেরপুর জেলার সাধারন সম্পাদক হাকিম বাবুল, কৃষি বিপনন কর্মকর্তা ফাতেমা খাতুন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বর্তমান বাজার মুল্য ও বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এসময় তারা বাজারে কাঁচামরিচ, ডিম এবং মাংসের দাম স্থিতিশীল থাকলেও সয়াবিন তেলের সংকট ও উচ্চমুল্য, পেঁয়াজ ও আলুর উচ্চমুল্যের বিষয়টি সভায় তুলে ধরেন।
নতুন আলু বাজারে এলেও দাম কেজিপ্রতি ১২০ টাকার ওপরে, পুরাতন আলু বিক্রী হচ্ছে ৮০/৮৫ টাকা কেজি দরে। সয়াবিন তেল অনেকটাই মার্কেট আউট। যদিওবা ১৬৫ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বভিন্ন ব্র্যান্ডের কিছু সয়াবিন তেল মিলছে, তবুও সেই তেলের সাথে ওই কোম্পানীর অন্যান্য ভোগ্য পণ্য সাথে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাছাড়া নতুন নতুন সব্জী বাজারে এলেও বাজারে দাম এখনও সেভাবে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসেনি। কেজিপ্রতি ৭০/৮০ টাকার নীচে সব্জী মিলছে না। এজন্য বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরো জোরদার করা এবং আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ছাত্র প্রতিনিধি মামুনুর রহমান নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, এক বাজার থেকে কাছাকাছি বাজারেও দেখা যায় নিত্যপণের দামের ক্ষেত্রে ব্যাপক ফারাক দেখা যায়। ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতা এবং ব্যাবসায়িক সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দ্রব্যমুল্যের অস্থিতিশীতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। উৎপাদকদের জন্য সরাসরি বাজারে বিক্রীর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা গেলে কিছুটা কম দামে সাধারণ মানুষ পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারতো বলে তারা মতামত দেন। তছাড়া ব্যবসায়ীদের ভোক্তা বান্ধব হওয়া এবং নৈতিকতা উন্নয়নের ওপর আহŸান জানান। সাংবাদিক রফিক মজিদ সিন্ডিকেট ব্যবসার কারনে প্রতিনিয়ত শেরপুর জেলায় নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিনের থেকে খোলা সয়াবিনের দাম বেশি।
মাছ, ডিম, আলু, বেগুনসহ সব ধরনের সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। কোন কৃষক কমদামে কৃষিপণ্য বিক্রি করলে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা তাকে হুমকি দিয়ে তার সব কৃষিপণ্য কিনে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। শাকের আটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। এভাবে প্রতিনিয়ত নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে কষ্টে রয়েছে সাধারন মানুষ। তাই আসন্ন রমযানে যেন সবকিছুর দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে থাকে সেজন্য জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের বাজার মনিটরিংয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ব্যবসায়ী শাহী ভান্ডারের মালিক মাসুদুর রহমান বলেন, বাজারে এখন সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। কোম্পানীগুলো চাহিদামতো তেল দিচ্ছেনা।
সংকটের কারণে কোম্পানীগুলো তাদের অন্যান্য ভোগ্যপণ্য কেনাবেচা করতে বাধ্য করছে। সাপ্লাই চেনের সংকটের কারণে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে। তাছাড়া আদালতে রিটের স্থিতাবস্থার কারণে খোলা ভোজ্য তেল বিক্রী এখনও চলছে। এতে আইনগত কোন বাঁধা নেই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যে বেড়েছে এটা সকলের আলোচনাতেই উঠে এসেছে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পক্ষ নিয়মিত বাজার তদারকি ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা আশাকরি ব্যবসায়ীরা মুনাফা করবেন, এটা ঠিক। কিন্তু সেটা যেন অবশ্যই যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে। এজন্য তিনি নিজেদের নৈতিকতা উন্নয়নের ওপর জোড় দেন। তাছাড়া ভোক্তাদেরও আরো সচেতন হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, বাজারে কোন জিনিসের সংকট হলেই অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন, এই প্রবণতা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজুয়ান, জেলা মৎস্য বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক সুলতানা লায়লা তাসনীম, স্টেডিয়াম মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি লাল চাঁন ফকির, ফল ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম, এনজিও সংগঠক তাপস বিশ্বাস, আদিবাসী নেতা সুমন্ত বর্মন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ক্যাব সদস্য, ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন পর্যায়ের সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভা শেষে দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, কার্ডে মাধ্যমে নিত্যপণ্য বিক্রী এবং টিসিবি’র ট্রাক সেলের পরিমাণ বাড়নো, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, আলাদা কনজ্যুমারস মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠাসহ ৮ দফ দাবীতে ক্যাবের পক্ষ থেকে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের নিকট হস্তান্তর করা হয়।