মোঃ কামাল হোসেন, অভয়নগর প্রতিনিধি
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়িয়ে পড়া এনজিও গুলোর অভিনব প্রতারণার কবলে অসহায় সাধারণ মানুষ। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওইসব এনজিও গুলো খুবই কৌশল অবলম্বন করে ভুক্তভোগী অসহায় মানুষদের সাথে প্রতিনিয়ত দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ভূঁইফোড় এনজিও, এর মধ্যে কিছু আছে সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত আর কিছু আছে অননুমোদিত। রক্তচোষা এনজিও গুলোর অভিনব নির্যাতনের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে সাধারণ ঋন গ্রহীতারা। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব এনজিও থেকে যে কোন পরিমান ঋন গ্রহন করতে হলে শর্ত বেঁধে দেয়। লোন গ্রহনের শর্ত মানলে ঋন দেওয়া হবে নতুবা ওই সদস্য বাতিল করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে ওই সব এনজিও থেকে ঋন গ্রহনের আগে একজন ঋন গ্রহীতাকে সঞ্চয় জমা করতে হয়।
ঋন গ্রহনের শর্ত থাকে ননজুডিশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পে ঋনগ্রহনকারী ও তার অভিভাবকের স্বাক্ষর দিতে হবে যা সম্পূর্ণ বেআইনি পন্থা এবং ঋন গ্রহনকারীর নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টের ব্লাংক চেকের পাতা স্বাক্ষর যুক্ত গ্রহন করে ওই সব এনজিও গুলো যা বাংলাদেশ আইনের পরিপন্থী। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোন কারণ বশতঃ ঋণ গ্রহনকারী ঋনের টাকা নিয়ে সময়মতো কিস্তির টাকা পরিশোধে ব্যর্থহয় তবে এনজিও গুলো ঋণ গ্রহনকারীর কাছ থেকে গ্রহনকরা ব্লাংক চেকের পাতায় নিজেদের মনমতো এনজিওর পাওনা টাকার থেকে তিনগুন বেশি টাকার অংক লিখে চেক ডিজঅনার করে, আদালতে মামলা করে হয়রানি করে থাকে। ফলে, আদালতে ঋণগ্রহনকারীরা পড়ে চরম বিপাকে।
একসময় ঋণ গ্রহীতারা এনজিওর প্রতারণার শিকার হয়ে সহায়সম্বল সব হারিয়ে পথে বসে, আবার কেউ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে চলে যাওয়ার ও ঘটনা হরহামেশা ঘটতে থাকলেও এর প্রতিকার পাওয়ার উপায় নেই। এনজিও থেকে ঋণ গ্রহনকারী উপজেলার নওয়াপাড়া বুইকরা গ্রামের শাহিনা বেগম জানান, আমি আশা এনজিও থেকে টাকা উঠিয়েছি, টাকা গ্রহন করার সময় ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও ব্যাংকের ব্লাংক চেকের পাতা আমার স্বাক্ষর নিয়ে জমা দিতে হয়েছে, শুধু একটা কিস্তি দিতে দেরি হয়েছে তাই মামলার ভয় দেখাচ্ছে। আরএক ভুক্তভোগী শ্রীধরপুর গ্রামের রাশিদা বেগম এনজিও চেক ডিজঅনার মামলায় পড়ে স্বামী সন্তান নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ওই সব এনজিও গুলো সরকার ঘোষিত নিয়মনীতিকে থোড়াই কেয়ার করে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে সরকার অসহায় গরীব মানুষের কথা চিন্তা করে, বিভিন্ন সময় কার্যক্রম বন্ধ করলেও ওই সব এনজিও গুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়। অন্যদিকে অভয়নগর উপজেলায় ভূঁইফোড় ডেইলি কিস্তি নামে কিছু এনজিও বা সমিতি নামে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, এদের নেই কোন সরকারি অনুমোদন, নেই কোন নিয়ম কানুন। নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চড়া সুদে টাকা অসহায় মানুষদের দিয়ে রক্ত চোষার মতো বিভিন্ন ভাবে কৌশলে ঋণ বিতরণ ও আদায় করে চলেছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি হলেও এদের রয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব, যে কারনে ওই সব ভূঁইফোড় নামধারী এনজিও গুলোর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো থাকেনা।
ফলে দিন দিন এনজিও গুলোর কারণে মানুষ অসহায় থেকে আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়ছে। সচেতন মহল দাবি করে জানিয়েছেন, উপজেলার সকল এনজিও’র কর্মকান্ড গুলো মনিটরিং করে তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন। এবিষয়ে নওয়াপাড়া আশাসহ বিভিন্ন এনজিও ম্যানেজারের কাছে ফাঁকা ব্লাংক চেক ঋণগ্রহনকারীর কাছ থেকে গ্রহন করার বিষয় ও বিভিন্ন হয়রানি করার বিষয় জানতে চাইলে তারা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোন ঋণ গ্রহনকারী থেকে ফাঁকা স্টাম্প ও ব্লাংক চেক গ্রহন করা হয়না। এবিষয়ে যশোর জেলা প্রসাশক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারের মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ফোনটি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।