রেলস্টেশনের যৌবন পুনরুদ্ধারের দাবিতে ট্রেন থামালেন জগতির স্থানীয়রা

মাসুদ রানা :-


দেশের সর্বপ্রথম রেল স্টেশন জগতির সংস্কার, সকল ট্রেনের যাত্রা বিরতি ও যাত্রীসেবার দাবিতে ঢাকাগামী বেনাপল এক্সপ্রেস ট্রেন থামিয়ে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। ১৫ নভেম্বর শুক্রবার কুষ্টিয়ার বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন থামিয়ে রেল লাইনের ওপর সমবেত হয়ে,বিকেল ৫টা থেকে সন্ধা ৭টা পর্যন্ত ট্রেনটিকে আটকে রেখে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন তারা।

এতে করে ভোগান্তিতে পড়েন ট্রেনের যাত্রীরা। খবর পেয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পশ্চিমসঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মুঠোফোনে বিষয়টির সমাধানের আলোচনা করেন এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে, আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নিলে ২ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

উল্লখ,১৬২ বছর পূর্বে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর জগতি রেল স্টেশনটি স্থাপন করেন বৃটিশ। ব্রিটিশ শাসনামলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্য পরিবহন কাজের জন্য ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি বাংলাদেশে প্রথম রেলস্টেশন স্থাপন করে। প্রতিষ্ঠানটি ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে রানাঘাট এবং একই বছরের ১৫ নভেম্বর রানাঘাট থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেলপথ চালু করে।

এর থেকেই এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে স্টেশনটি। কিন্তু কালের বিবর্তনে পুরোনো স্টেশনটি আজ তার জৌলুস হারিয়েছে। ট্রেনের যাত্রা বিরতি তুলে নেয়ার পরথেকে অবহেলা, অযত্ন আর সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে স্টেশনটি। এ ছাড়াও স্টেশনের কয়েকশ বিঘা জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। এসব দেখভাল করার যেন কেউ নেই।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা শুনেছি ও দেখেছি, স্টিম ইঞ্জিনের (বাষ্পচালিত) কয়লার ট্রেন চলাচল করতো। এখানে দুটি পানির ট্যাংকি কালের স্বাক্ষি হয়ে দাঁড়ীয়ে আছে। সে সময়ে কয়লার ইঞ্জিনে এখান থেকে পানি দেওয়া হতো। দেখভালের অভাবে রেলওয়ের মুল্যবান
গুলো নষ্ট, চুরি হয়ে গেছে ও যাচ্ছে।
তৎকালীন সময়ে স্টেশনটিতে লোকাল,মেইল,মালবাহী ট্রেন এসে থামতো। দুই থেকে পাঁচ পয়সা ভাড়া দিয়ে মানুষ ট্রেনে চলাচল করতো।


বর্তমানে এই স্টেশনের বুকচিরে আন্তঃদেশীও, আন্তঃনগর,লোকাল, মেইল ও কমিউটারসহ অনেক ট্রেল চলাচল করলেও সারদিনে মাত্র একটি লোকাল ট্রেন মাত্র একবার থামে। দেশের প্রথম ট্রেন স্টেশনটি স্মৃতি ধরে রাখতে স্টেশনটিকে সংস্কার করে আধুনিকায়ন, সকল ট্রেনের যাত্রা বিরতির দেয়ার জন্য সরকার ও রেল কতৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।আর তাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করা না হলে এই স্টেশনের রেললাইন অবোরেধ করে লাগাতার আন্দোলন করা হবে এবং কোন ট্রেন চলাচল করতে দেয়া হবেনা বলে হুশিয়ারী দেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানায়,স্টেশনটিতে ট্রেনের যাত্রা বিরতি না থাকায় স্টেশনটি বন্ধ রয়েছে।ফলে এই এলাকার বাসিন্দারা পোড়াদহ ও কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন ব্যবহার করে।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে ওই স্টেশনে একজন গেটম্যান ছাড়া আর কোনো কর্মচারী নাই। রাত নামলেই এখানে মাদকসেবীদের আড্ডা জমে। স্টেশনের খালি জায়গাজুড়ে রাখা হয়েছে পাথর। এতে স্টেশনের সার্বিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি নস্ট ও চুরি হচ্ছে রেলের মুল্যবান সম্পদ।

সরেজমিনে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, এক সময়ের যৌবনা জগতি এখন মৃত। যাত্রী মুখর স্টেশনটি শুনশান নিরব।কালের স্বাক্ষি হিসেবে দাঁড়ীয়ে আছে জরাজীর্ণ স্টেশনের বিল্ডিং,নেই জানালা,দরজা, আলোর ব্যবস্থা বা যাত্রীদের বসার কোন যায়গা।
কর্তৃপক্ষের অযত্ন-অবহেলায় জরাজীর্ণ হয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। স্টেশনের ওয়েটিং রুম ভেঙে পড়েছে। প্লাটফর্মে ইট ও গাঁথুনি ক্ষয়ে গেছে। সংস্কারবিহীন স্টেশনের দ্বিতল ভবনের ছাদে জন্মেছে আগাছা। বিশাল আয়তনের পানির ট্যাংক দুটি পরিত্যক্ত। স্টেশনের অফিস রুমগুলো বন্ধ। চারদিকে বিরাজ করে নির্জন পরিবেশ।

আরও জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬২ সালে রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিকে শুধু অর্থনৈতিক কাজের জন্য রেলপথ চালু করা হয়। ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রথম এ অঞ্চলে রেলপথ স্থাপন করে। প্রতিষ্ঠানটি ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে রানাঘাট এবং ওই বছরের ১৫ নভেম্বর রানাঘাট থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেলপথ চালু করে। এক কালে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্য পরিবহনে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে জগতি রেলওয়ে স্টেশনটির গুরুত্ব ও কদর ছিল যথেষ্ট। জরাজীর্ণ এই রেলস্টেশন এখন শুধুই ইতিহাস। আজ ১৫ নভেম্বর এই রেল স্টেশনের বয়স হবে ১৬২ বছর।

এ বিষয়ে রেলওয়ে বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলীয় পাকশী কার্যালয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, হঠাৎকরে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি থামিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। প্রায় দুই ঘণ্টা ট্রেনটি থামিয়ে রাখার কারণে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। রেল কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে আমরা আন্দোলনকারীদের আশ্বাস দিয়েছি। তাদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। স্টেশনটি দ্রুত সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনা করে জগতির আগের রুপ ফিরিয়ে আনার চেস্টা করা হবে।

Leave a Reply