বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে বাপ-ছেলে-ভাতিজারা ছিলেন উত্তরায় ছাত্র-জনতা গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড ও ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এমপি তথা পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব হাসানের সক্রিয় কর্মী। কিন্তু ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এবার বিএনপির ব্যানারে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ খুঁজছে সালাম আলী নামের উত্তরার এক আওয়ামী লীগের দোসর।
বিএনপির রাজনীতিতে শুধু নিজেকে সক্রিয়ই নয় বরং সালাম আলী এরই মধ্যে নিজেকে উত্তরা পশ্চিম থানা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী ঘোষণা করে তুরাগ ও উত্তরার আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে বিএনপিতে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেয়ার একাধিক ছবি ও তথ্য-প্রমাণ এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। এদের মধ্যে উত্তরায় ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যার মূল মাস্টারমাইন্ড হাবিব হাসান ও তার ছোট ভাই কুখ্যাত সন্ত্রাসী-আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আল সোহেলের অনুসারী তুরাগ থানা ছাত্রলীগ নেতা আবু সাঈদ, সাব্বির হোসেন, মুসা, যুবলীগ নেতা মানিক, আলআমিন, গন্ডার সোহেল, যুবলীগ নেতা রিপন, আলম, কামাল ও পশ্চিম থানা যুবলীগ নেতা সেলিমসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মীকে সালাম আলী বিএনপিতে পুনঃর্বাসনের চেষ্টা করছে।
এরই মধ্যে সালামের নেতৃত্বে বিএনপির একাধিক মিটিং-মিছিলে ছাত্র হত্যায় সরাসরি জড়িত এসব ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীদের অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তুরাগ ছাত্রলীগ নেতা আবু সাঈদ, সাব্বির হোসেন ও মুসা সালাম আলীর বড় ছেলে তানভীর হোসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় ছেলের এসব ছাত্রলীগের বন্ধুদেরকে বিএনপিতে জায়গা করে দেয়ার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে সালাম আলী নিজে। এদের মধ্যে সাব্বির হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পদধারী নেতা এবং এই সাব্বিরের সাথে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সাধারণ শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লেখক ভট্টাচার্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেনের গভীর সখ্যতার একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বৃহত্তর উত্তরায় ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানো আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ও ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক এমপি হাবিব হাসানের সাথে পশ্চিম থানা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী সালাম আলী সখ্যতার একাধিক ছবি ও ভিডিও।
জানা যায়, ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় জড়িত হাবিব হাসানের ভগ্নীপতি ও ডিএনসিসি ৫২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ সঙ্গে সালাম আলীর রয়েছে বাল্যবন্ধুত্বের সম্পর্ক। উত্তরায় ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালানো অপর মাস্টারমাইন্ড ডিএনসিসি ৫৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও হাবিব হাসানের অন্যতম দোসর জাহাঙ্গীর আলম যুবরাজের সঙ্গেও সালাম আলীর রয়েছে বেশ সখ্যতা। সেই সাথে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে শেখ হাসিনার আমলে হাবিব হাসানের ছোট ভাই, ছাত্র-জনতার উপর গুলি চালানোর অপর মাস্টারমাইন্ড আলাউদ্দিন আল সোহেলের সঙ্গে সালাম আলীর যোগসাজশে জমি দখল ও উত্তরা ৫নং সেক্টর আহালিয়া এলাকার ডিস বাণিজ্যের বিস্তারিতও। ৫ আগস্টের পর এসব সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে বর্তমানে এসব অবৈধ দখল-বাণিজ্য সালাম আলী নিজেই দেখাশুনা করছেন।
শুধু তাই নয়, সালাম বর্তমানে ছাত্রহত্যায় জড়িত উত্তরার যুবলীগ নেতা মামুন সরকারের এজেন্ট রেজাউলের সঙ্গে যোগসাজশে তুরাগের ৫২নং ওয়ার্ড যাত্রাবাড়ী-পাকুরিয়া এলাকায় রমরমা ইন্টারনেট ও ডিস ব্যবসা পরিচালনা করছে। ওই ব্যবসা থেকে অর্জিত মোটা অংকের অর্থ রেজাউলের মাধ্যমে ভাগ পায় যুবলীগ ক্যাডার মামুন সরকারও। এছাড়াও সালামের আরেক ভাতিজা মারুফ তুরাগ থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হওয়ায় ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক থাকলেও যাত্রাবাড়ী এলাকায় মারুফের নিয়ন্ত্রণাধীন ইন্টারনেট ব্যবসা অপর ভাগিনা সিদ্দিককে দিয়ে নিজের দখলে নিয়েছে এই সালাম আলী। অনুসন্ধানে সালাম আলীর চাচাতো ভাই ওয়াহিদ, মহিউদ্দিন ও ভাতিজা শহিদ এবং নাইম হাসান তুরাগ ও উত্তরা এলাকার ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্তর প্রমাণও এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। এদের মধ্যে সালাম আলীর চাচাতো ভাই মহিউদ্দিন উত্তরা পশ্চিম থানা যুবলীগের সক্রিয় নেতা এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি হাবিব হাসানের ভাই সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন আল সোহেলের শুটার বাহিনীর অন্যতম সদস্য।
পলাতক আলাউদ্দিন আল সোহেলের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একাধিক মিছিল মিটিংয়েও মহিউদ্দিনের সম্পৃক্ততার একাধিক প্রমাণও রয়েছে। খোলস পাল্টে মহিউদ্দিনকে বর্তমানে সালাম আলীর নেতৃত্বে বিএনপির একাধিক মিছিলে অংশ নিতেও দেখা গেছে। বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সালাম আলীর অপর চাচাতো ভাই শহিদ সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন আল সোহেলের একনিষ্ঠ কর্মী রিপন ও গণ্ডার সোহেলের বন্ধু। চাচাতো ভাই শহিদের বন্ধু হওয়ায় আওয়ামী লীগের এই দুই সক্রিয় এজেন্টকেও সালামের নেতৃত্বে বিএনপির মিছিলের সামনের সারিতে দেখা গেছে। এছাড়াও সালাম আলীর চাচাতো ভাই ওয়াহিদ নিজেও আলাউদ্দিন আল সোহেলের অনুসারী। উত্তরার বিএনপিতে মুখোশধারী নেতা সালাম আলীর আওয়ামী সম্পৃক্ততার অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে এসেছে সালামের অপর ভাতিজা নাইম হাসানের নামও। সে উত্তরা পশ্চিম থানা যুবলীগ ক্যাডার ও উত্তরার ফার্নিচার মার্কেটের কুখ্যাত চাঁদাবাজ কবির হাসানের সক্রিয় কর্মী। কবির হাসান ঢাকা-১৮ আসনের পলাতক সাবেক এমপি ও উত্তরা ছাত্র-জনতা গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড হাবিব হাসানের ভাগিনা। এই কবির হাসানের সঙ্গে সালাম আলীর ভাতিজা নাইম হাসানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের একাধিক ছবি এখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয় উত্তরা পশ্চিম থানা যুবলীগ ক্যাডার সেলিম ভাতিজা নাইম হাসানের বন্ধু হওয়ায় সালামের নেতৃত্বে উত্তরায় বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচিতে যুবলীগ ক্যাডার সেলিমকেও সামনের সাারিতে দেখা গেছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তুরাগ ও উত্তরার স্থানীয় একাধিক বিএনপি প্রতিবেদকে জানায়, সালাম আলী অতীতে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি ও সাংগঠনিক পরিকল্পনা ফাঁস করে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব হাসানের আস্থাভাজন হয়ে ওঠে। বর্তমানে পলাতক হাবিব হাসান ও তার ছোট ভাই সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন আল সোহেলের এজেন্টদেরকে সালাম তুরাগ ও উত্তরার কমিটিতে পুনঃর্বাসনে লিপ্ত রয়েছে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে এমন চতুর্মুখী সখ্যতা ও বিএনপিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডারদের পুনঃর্বাসনে অপতৎপরতায় সালাম আলীর সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, এইগুলা আগের ছবি-ভুয়া। সাব্বির ছাত্রলীগ করার ১৫ বছর আগে আমার সাথে রাজনীতি করতো। এইগুলা নিয়া আমারে সেনাবাহিনীর লোকজনও ডাকছিল, তারাও আমার উপর রাগ হইছে। এ গুলো কিছু না। আপনি আসেন আপনার সাথে দেখা কইরা সব কমু। বক্তব্যে যুবলীগ নেতা মামুন সরকারের কর্মী রেজাউল এবং হাবিব হাসানের ছোট ভাই কুখ্যাত সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন আল সোহেলের সঙ্গে নিজের ইন্টারনেট ও জমি ব্যবসার অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। তবে, সম্প্রতি উত্তরায় বিএনপির একাধিক মিটিং-মিছিল ও কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের এসব চিহ্নিত ক্যাডারদের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এ নিয়ে প্রতিবেদককে সদুত্তর দিতে পারেননি অভিযুক্ত সালাম আলী। এ ছাড়াও তিনি আরো বলেন, আ.লীগ নেতা হাবিব হাসান, কাউন্সিলার যুবরাজসহ ও ছাত্র লীগ নেতাদের সাথে এসব তাদের পারিবারিক অনুষ্ঠানের ছবি।