মোহাম্মদ আরমান চৌধুরী ইউ এ ই প্রতিনিধি
গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হয়েছে অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের বৈধ লাভের কার্যক্রম। দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা সাধারণ ক্ষমার আওতায় বৈধ হওয়ার সুযোগ, যা ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়াও মিলছে প্রবাসীদের থেকে।
কনস্যুলেট সূত্রে জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪৩ জনকে ট্রাভেল পারমিট ২ হাজার ২৫৫ জনকে ই পাসপোর্ট এবং ২৭৪ জনকে এমআরপি পাসপোর্ট দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত আবুধাবি দূতাবাস থেকে বৈধতা বা দেশে চলে যাওয়ার লক্ষ্যে কতজন ট্রাভেলপারমেন্ট নিয়েছে এই ব্যাপারে লেবার কাউন্সিলর (লোকাল) লুৎফুন নাহার নাজিম এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে ব্যস্ততা দেখিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। সাধারণ ক্ষমার আওতায় এদের মধ্যে যারা দেশে যেতে চান যেতে পারবেন। যারা বৈধ হবেন হতে পারবেন।
আরব আমিরাত সরকার চাইছে যারা অবৈধ হয়ে আছেন তারা যেন ভিসা লাগিয়ে বৈধ হতে পারেন। এই লক্ষ্যে আমিরাতে ইমিগ্রেশন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের কাছে জমা পড়া প্রায় ১৪০০ পাসপোর্ট দুবাই বাংলাদেশ কোন কনস্যুলেটে জমা দেয়া হয়েছে। এতে করে যাদের পাসপোর্ট কনস্যুলেটে রয়েছে তারা যেন কনস্যুলেটে গিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। দুবাই আল আবির ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের সেবা দেয়ার জন্য হেল্প ডেক্স খোলা হয়েছে। সেখান থেকেও প্রবাসীরা সেবা নিতে পারেন।
আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রশাসন। সহজ পদ্ধতিতে কীভাবে সাধারণত ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করা যায় এ ব্যাপারে দেশটির ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি এন্ড সিটিজেনশিপ মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাই কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন জানান, পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে আমিরাত সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা অনিয়মিত তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভিসা লাগানো কার্যক্রম শুরু করেছে। এটি একটি ভালো দিক। যে সকল কোম্পানিতে লোকবল দরকার সেখানে আমরা টিম পাঠাচ্ছি। যেখানে ভিসা সংশ্লিষ্ট সন্ধিহান থাকলে আমরা তার সমাধান করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, যাদের পাসপোর্ট নেই এ ব্যাপারে আগেও বলেছি এখনো বলছি তা যেন দ্রুত পাসপোর্ট করিয়ে নেন। আমরা চাই বৈধতার সুযোগ থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হন। তিনি বলেন, দুবাইয়ের আবির ইমিগ্রেশনে দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেট এর পক্ষ থেকে প্রবাসীদের সেবা দেয়ার জন্য হেল্প ডেক্স খোলা হয়েছে। সেখান থেকেও প্রবাসীরা সেবা নিতে পারবেন।
শুধুমাত্র রেসিডেন্স ভিসা নয়, এবারের সাধারণ ক্ষমায় ভিজিট ভিসায় আমিরাত এসে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের জন্যও বৈধ হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে, যারা বৈধ হওয়ার জন্য অনুমতি পাবেন তাদেরকে ৬ মাসের জব সিকার ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। এই ছয় মাসের মধ্যে পছন্দসই কর্মস্থল ঠিক করে তারা ভিসা লাগাতে পারবেন।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাই শ্রম কাউন্সিলর আব্দুস সালাম জানান, যারা আরব আমিরাতে অবৈধভাবে অবস্থান করছে বৈধতার বিষয়টি নিয়ে দুবাই কনস্যুলেট লেবার সেকশন কাজ করছে। মূলত যারা এদেশে থাকতে চান না দেশে ফেরত যেতে চায় ট্রাভেল পারমিট নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা প্রায় শুরু থেকে ১৮৩ ট্রাভেল পারমিট আমরা ইস্যু করেছি। আমার বিশ্বাস তারা হয়তো বাংলাদেশে চলে যাবেন।
বেশিরভাগও চেষ্টা করেন বৈধ হওয়ার জন্য। যদি শেষের দিকে গিয়ে ভিসা ম্যানেজ করতে না পারে বা বৈধ হতে না পারে তখন আমাদের কাছে হয়তো ট্রাভেল পারমিট এর জন্য আসবে। সে ক্ষেত্রে হয়তো ট্রাভেল পারমিটের ছাপটা বেশি পড়বে। এখন পাসপোর্ট এর উপর বড় রকমের চাপ পরছে। পাসপোর্ট মেয়াদ শেষ বা নতুন পাসপোর্ট লাগবে তারা এখানে এসেছেন। আমরা এ দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।
২০১৮ সালেও সংযুক্ত আরব আমিরাত অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিল,ওই সময়ে প্রায় ২ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করে বৈধ হয়েছিলেন। সাধারণ ক্ষমায় বৈধ হওয়ার লক্ষ্যে তখন বাংলাদেশ কন্সূলেট দুবাই অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ১ লাখ ১২ হাজার ৫৬৪ টি পাসপোর্ট ইস্যু করেন।
দুবাই ইমিগ্রেশনে ইতিমধ্যে অবৈধভাবে বসবাসরত পলাতক অভিবাসীদের জব্দকৃত ১৪০০ পাসপোর্ট বাংলাদেশ কনস্যুলটে জমা দিয়েছেন। যাতে অবৈধ অভিবাসীরা কনসুলেট থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বৈধ হওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারন। দেশটির প্রশাসন সাধারণ ক্ষমার সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করার জন্য বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের স্থানীয় ইমিগ্রেশনের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে নির্দেশনা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাই প্রবাসীরা যেন সময় থাকতে ভিসা লাগিয়ে বৈধতা করতে পারেন এই ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন।