নিজস্ব প্রতিবেদক ইউএই প্রতিনিধি
বেসরকারি হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১২ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশীর বসবাস করছে। আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে রেকর্ড রেমিট্যান্স আসে। সম্প্রতি বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আরব আমিরাতে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এ অপরাধে ৫৭ জন বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাঁজা দেয়া হয়েছে। তাদের মুক্ত করতে নিরলস প্রচেষ্টা ও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর ও দুবাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন।
বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ঘিরে গত ১৯ জুলাই সংযুক্ত আরব আমিরাতে কয়েক হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এই ঘটনায় দেশটির ফেডারেল কোড ৫৭ জন বাংলাদেশিকে আইনের আওতায় এনে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন।
বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে ৫৭ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে কিভাবে মুক্ত করা যায় সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে আমিরাতের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর।
আবুধাবিতে ফেডারেল কোর্ট অফ আপিলের মাধ্যমে আরব আমিরাতে ৫৭ জন বাংলাদেশী প্রবাসীর গ্রেপ্তার ও সাজা সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে এবং দূতাবাসকে বিনা খরচে সহায়তা করার জন্য দূতাবাস নিয়োগ অনুমোদন করছে। বন্দীদের মুক্তি দিতে এবং মামলার বিষয়ে অন্য কোনো আইনি পথ গ্রহণ করতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া করতে হবে।
কনসাল জেনারেল বিএম জামাল জানান, এসব প্রবাসীদের গ্রেফতার কিংবা তাদের শাস্তি হওয়ার পিছনে কনস্যুলেটের ইন্ধন বা সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এসব কথাবার্তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা-বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সোমবার বিকেলে গণমাধ্যম কর্মীদের এসব কথা বলেন তিনি।
এদিকে ৫৭ জন প্রবাসী গ্রেপ্তার ও শাস্তির পেছনে দুবাইয়ে নিযুক্ত কনসাল জেনারেলের ইন্ধন রয়েছে এই মর্মে গণমাধ্যমে প্রচারিত কয়েকজন আইনজীবীর বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন।
তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীরা কমিউনিটির পরিচিত ব্যক্তি নয়। তাদেরকে আমি চিনিনা, জানিনা। বিক্ষোভকারীরা ঘটনার দিন আটক হয়েছে এবং তাদের দ্রুত বিচার হয়েছে এই বিষয়টি আমি স্থানীয় গণমাধ্যমে জেনেছি। এক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু ছিল না। এই দেশটি আইন কানুনের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর এবং শৃঙ্খল। স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এদেশের সরকার বদ্ধপরিকর। তাই এখানে আমিরাতের প্রশাসনকে বিক্ষোভকারীদের প্রসঙ্গে কোন ইন্ধন বা পরামর্শ দেয়ার সুযোগ নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ বাংলাদেশিকে মুক্ত করতে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এই ৫৭ জন বাংলাদেশিকে মুক্ত করার বিষয়ে আইনগত সহায়তা দিতে আমিরাতে কাজ করছেন ইলোরা আফরিন নামে বাংলাদেশী এক আইনজীবী।
তিনি জানান, সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ জন বাংলাদেশীর পক্ষে আপিল করতে আর মাত্র ২ দিন সময় রয়েছে। ৫৭ জন প্রবাসীর পক্ষে লড়তে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নিসহ ১ লক্ষ ৭১ হাজার দিরহাম আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে এ বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান ।
প্রবাসে অবস্থানরত সচেতন ব্যক্তি বাংলাদেশ সমিতি দুবাইয়ের সহ-সভাপতি ইয়াকুব সৈনিক জানান, বাংলাদেশের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তাই বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াই না করে কূটনীতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চালানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
তবে প্রবাসীদের নানা সমস্যা নিরসনে বিগত সরকারগুলো কোন ধরনের বাস্তব পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই সম্প্রতি বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমিরাত প্রবাসীদের পুঞ্জীভূত সমস্যাগুলো নিরসনের দাবি জানিয়েছেন তারা।