দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় গণপুর্তের প্রকৌশলীকে বদলি

স্টাফ রিপোর্টার

রাজধানীর সোবহানবাগ জামে মসজিদের আধুনিকায়ন ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ নথিতে শেষ দেখিয়ে পুরো বিল পরিশোধ করে দেওয়া হলেও বাস্তবে অনেক কাজ এখনো বাকি।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শনকালে এমন নানা অসংগতি দেখতে পাওয়ায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম ফারুককে এরই মধ্যে বাগেরহাটে বদলি করা হয়েছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৪৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় গত ৩১ ডিসেম্বর। এরপর গণপূর্তসচিবকে নিয়ে তা পরিদর্শন করতে যান প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তাঁরা নানা অসংগতি দেখে ক্ষুব্ধ হন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকজন প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম ফারুককে শাস্তিমূলক বদলি করতেও উদ্যোগ নেন পূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। বদলির প্রস্তাব ওঠার পর কিছুদিন তা আটকে থাকে। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর টানাপোড়েন শেষে গতকাল বুধবার শাহ আলম ফারুককে বদলির অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার গণমাধ্যম কে বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে স্বাভাবিক নিয়মেই শোকজ হয়; জবাবও দেওয়া হয়। আর সোবহানবাগ মসজিদ নির্মাণকাজের যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তা মন্ত্রণালয় থেকে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে শোকজ করেছে; ব্যবস্থাও মন্ত্রণালয় নেবে।’ গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৭ সালে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী সোবহানবাগ মসজিদটি নান্দনিক নকশায় ১০ তলা করা হয়েছে। সেখানে ৩ হাজার ৭০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। দশমিক ৩৫ একর জমির ওপর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। মসজিদের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের মার্চ মাসে।

কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে ডিসেম্বর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। এতেও কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ানো হয় আরেক দফা। এভাবে তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

এ পর্যায়ে প্রকল্প সমাপ্ত করা হয় কিছু কাজ বাকি রেখেই। সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও গণপূর্তসচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন গত ১৬ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা নানা অসংগতি দেখে ক্ষুব্ধ হন।

পরে ১৮ জানুয়ারি প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সালাহ উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী ঢাকা গণপুর্ত (ডিভিশন-২) মোহাম্মদ শাহ আলম ফারুক, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী উৎপল পোদ্দার, নির্বাহী প্রকৌশলী (ইএম-১) ড. আশরাফুল ইসলাম, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (ইএম) ফাহমিদ ইফতেখার আলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

পূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফরিদুল হকের সই করা ওই নোটিশে বলা হয়, প্রকল্প সমাপ্ত হওয়ার পরও সিকিউরিটি গেট, রেইন প্রোটেকশন ওয়ার্ক, উইন্ডো সেফটি গ্রিল, লিফট, এসি, বৈদ্যুতিক বাতি, সিসি ক্যামেরাসহ আনুষঙ্গিক অনেক কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের কাজে অসংগতির জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নিতে গেলে প্রকৌশলী শাহ আলম ফারুকের পক্ষে অবস্থান নেন বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা।

গণপূর্তের ‘প্রাইস পোস্টিং’ হিসেবে পরিচিত ডিভিশন-২-এর দায়িত্ব পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে পালন করছিলেন শাহ আলম ফারুক।

তাই পূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তা তাঁকে বদলি করতে উঠে-পড়ে লাগেন। মন্ত্রণালয়ের চাপে শাহ আলম ফারুককে বদলি করার নথি খোলা হলেও অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর টেবিলে গিয়ে তা আটকে ছিল কিছুদিন। শাহ আলম ফারুকের স্থলে প্রথমে গোপালগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসানকে বসাতে চান মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা। কিন্তু এ ডিভিশনের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকায় এতে কিছুটা আপত্তি জানান প্রধান প্রকৌশলী।

পূর্ত ভবনের পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়, নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসানের বাবা ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

মূলত সে কারণেই কামরুল হাসানকে ডিভিশন-২-এর দায়িত্বে আনা যায়নি। এরপর প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার-২ এ এস এম সানাউল্লাহকে ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দিয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ আলম ফারুক গণমাধ্যম কে বলেন, ‘সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। এগুলো সূক্ষ্ম কাজ। এসব চাইলেই দ্রুত শেষ করা যায় না আর দরপত্রের বাইরে যেসব কাজের কথা বলা হচ্ছে, এর জন্য আমি দায়বদ্ধ না। মন্ত্রণালয়ের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছি।’ বদলির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Leave a Reply