মো.হাসমত উল্লাহ,লালমনিরহাট
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানায় ভাইয়ের হাতে ভাই খুন আসামী মোঃ রবিউল ইমলাম, কে গ্রেফতার করেন।গত (৮ই ফেব্রুয়ারী)২০২৪ইং বৃহস্পতিবার লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম,এর প্রেস ব্রিফিং করেন। জেলা পুলিশ সুপার এর দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) জনাব মোঃ আলমগীর রহমান ও অফিসার ইনচার্জ, আদিতমারী থানা মাহমুদ উন নবী ঘটনা স্থান পরিদর্শন করেন এবং পলাতক আসামীকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে অফিসার ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)এর নেতৃত্বে গঠিত আভিযানিক অভিযান পরিচালনা শুরু করে।
আসামী রবিউল ইসলাম ঘটনার পরহতেই আত্মগোপনে চলে যায় এবং মিজানুর রহমানের মৃত্যুর খবর জানার পর সীমান্ত পারি দিয়ে ভারতে প্রবেশের সুযোগ খুজতে থাকে মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। আভিযানিক টিম বিষয়টি অত্যন্ত আন্তরিকতা এবং যথাযথ পেশা-দারিত্বের সাথে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে। বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত তথ্য এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায় আসামী রবিউল ইসলাম হাতীবান্ধা থানা এলাকার দইখাওয়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে ভারতে প্রবেশ করবে।
আভিযানিক দলটি তাৎক্ষনিকভাবে দইখাওয়া সীমান্ত এলাকাসহ সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। আদিতমারী থানা পুলিশের তৎপরতা ও অভিযানের কারনে আসামী ভারতে পালাতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে শ্বশুর বাড়ী রংপুর এলাকা দিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। যার প্রেক্ষিতে আসামী পারুলিয়া বাজারে এসে কৌশলে সিএনজি যোগে রংপুরের উদ্দেশে রওনা করে। স্থানীয় সোর্স এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে গত ০৭/০২/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানাধীন ৮নং চেংমারী ইউনিয়নের ক্লাববাজার গ্রামস্থ (আসামীর শ্বশুর বাড়ী এলাকা) আসামীর খালা শ্বাশুড়ি মোছাঃ পারুল, স্বামী মোঃ খাত্তার এর বাসা হতে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর আসামীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পূর্ব বিরোধের জেরে ঘটনার দিন জমিতে সেচের জন্য নালা (ড্রেন) তৈরির সময় তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে আসামী মোঃ রবিউল ইসলাম তার হাতে থাকা কোদাল দিয়ে ভিকটিম মিজানুর রহমানের মাথায় গুরুতর আঘাত করে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায় মর্মে স্বীকার করে। গ্রেফতারের পর ধৃত আসামী রবিউল ইসলামের দেখানো মতে ঘটনাস্থল সংলগ্ন জনৈক সুমন নামক ব্যক্তির শ্যালো মেশিন ঘর হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কোদালটি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।
অদ্য ০৮/০২/২০২৪ ইং তারিখে আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক বিজ্ঞ আদালতে আসামী ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। বিজ্ঞ আদালত আসামীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। মামলার বাদী জমিলা খাতুন চম্পা (৩৮), স্মামী- মৃত মিজানুর রহমান, আদিতমারী থানাধীন বসিনটারী গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। মামলার বিবাদী মোঃ রবিউল ইসলাম (৩৫), পিতা- মোঃ খায়রুল আমিন বাদীনির স্বামীর আপন ছোট ভাই অথাৎ মামলার বাদিনীর আপন দেবর হয়। বাদিনীর স্বামী ভিকটিম মিজানুর রহমান এবং আসামী মোঃ রবিউল ইমলাম উভয়েই তাদের পৈত্রিক ভিটা ভাগবাটোয়ারা করে পাশাপাশি ভাবে বসবাস করছে।
পূর্ব হতে তাদের পৈত্রিক সম্পতির ভাগ বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল। বিভিন্ন সময় পারিবারিক বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে আপোষ মিমাংসা হলেও আসামী রবিউল ইসলাম সব সময় মনে আক্রোশ পোষন করতো। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন গত ০৫/০২/২০২৪ ইং তারিখ সকাল অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় আদিতমারী থানাধীন বসিনটারী গ্রামস্থ রেল লাইনের পার্শ্বে আসামী মোঃ রবিউল ইসলাম তার বর্গাকৃত জমিতে রোপনকৃত রোয়া ক্ষেত (বোরো ধান) দেখিতে যায়। ঐ সময় বাদিনীর স্বামী ভিকটিম মিজানুর রহমানও ঘটনাস্থলে গিয়ে তার জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য আসামী রবিউল ইসলামের বর্গাকৃত জমি দিয়ে ড্রেন নেয়াকে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে তর্ক বিতর্কের একপর্যায়ে আসামী রবিউল ইসলাম পূর্ব ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে ভিকটিমকে প্রকাশ্য দিবালোকে তার হাতে থাকা কোদাল দিয়ে ভিকটিমের মাথা বরাবর চোট মারলে উক্ত আঘাতে মাথার বাম পার্শ্বে লেগে কাটা ও গুরুত্বর জখম হয়।
পরবর্তীতে স্থানীয় জনসাধারন ভিকটিমকে অপরিচিত অটো ভ্যান যোগে আদিতমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। ভিকটিমের অবস্থা আরও অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য একই তারিখ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ০৬/০২/২০২৪ ইং তারিখ রাত অনুমান ০১.৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম মৃত্যু বরণ করেন। তৎপ্রেক্ষিতে ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে আদিতমারী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে আদিতমারী থানার মামলা নং- ০৬, তারিখ- ০৬/০২/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২ পেনাল কোড ১৮৬০ রুজুপূর্বক তদন্তভার এসআই/মোঃ আমিনুল ইসলামের উপর অর্পন করা হয়। মামলাটির তদন্ত অব্যাহত আছে। পরবর্তী তদন্তে ঘটনার বিষয়ে আরো বিস্তারিত প্রকাশ পাবে।