আবুল হাশেম রাজশাহী
রাজশাহীর বাঘায় ফাহিম মোন্তাসির প্রান্ত (১৮) নামের এক কলেজ ছাত্র কে লোহার রড় ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। রোববার (২১ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম পার্শ্বের বন্ধ থাকা চায়ের দোকানে এই ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ফাহিম মোন্তাসির প্রান্ত বাউসা মহাবিদ্যালয় থেকে এবার এইচএসসি পাশ করেছে। তিনি বাউসা হাটপাড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে।
এ ঘটনায় জড়িত দাবি করে বাউসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ কে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে রোববার সন্ধ্যায় বাউসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নের্তৃবৃন্দ এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। জানা যায়, ফাহিম মোন্তাসির প্রান্ত রোববার সকালে সেলিম হোসেনের চায়ের দোকানে বসে ছিল। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বাউসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদের ইন্ধনে কাজল হোসেন, রুবেল হোসেন, মারুফ হোসেনসহ ৮-৯ জনের একটি দল মুখে মাক্স পরে তাকে লোহার রড় ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ নভেম্বর Md Rubel Pramanik নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ফাহিম মুন্তাসির প্রান্ত’র ছবি ব্যাবহার করে তার মা কে জড়িয়ে একটি কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করা হয়। পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ “তোর মা এটিও জহুরুলের বাড়ি কাজ করে তোদের সংসার চালাই। বাড়িতে ভাত থাকেনা দেখে যে নেতা দুই দুই বার তোকে ভিজিডি কার্ড করে দিয়েছে সেই চালের কার্ড খেয়ে আবার সেই নেতারি বিরোধিতা করিস বেইমান তুই কখনো কোনো জায়গায় সদস্য ও হতে পারবি না। ফাহিম মুন্তাসির প্রান্ত। উক্ত পোস্টে ২৮জন ব্যাক্তিকে ট্যাগ করা হয়। এতে করে নেট দুনিয়ায় পোস্টটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর পর থেকে ফাহিম মোন্তাসির প্রান্ত’র মুঠোফোনে কল আসতে থাকে। ফলে রাগান্বিত হয়ে (২ ডিসেম্বর) বাউসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদের কাছে পোস্টের ব্যাপারে জানতে গেলে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
পরে ওই দিন এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাউসা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিকের ছেলে আবির হোসেন (২২) কে মারধর করা হয়। এ বিষয়ে বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক বলেন, ক্ষমতার দাপটে জাহিদ বাউসা ইউনিয়ন জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তার পেটোয়া বাহিনী দিয়ে পূর্বে অবৈধভাবে জমি দখল, সরকারি বন বিভাগের গাছ কর্তনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে মানুষকে মারধর তার বাহিনীর নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। রুবেল প্রামানিকের ব্যাক্তিগত কোন স্মার্ট ফোন নেই। জাহিদ নিজে Md Rubel Pramanik নামের ফেসবুক আইডি ব্যাবহার করে। এই আইডি থেকে প্রান্তর মা সম্পর্কে মন্তব্য করে পোস্ট করে জাহিদ। আর এ থেকেই ঘটনার সুত্রপাত। গত ২ ডিসেম্বর এই ঘটনার জের ধরে আমার ছেলে আবিরকে মারধর করে তবুও আমি কিছুই বলিনি। এ ঘটনায় সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ শালিশ বৈঠকে মিমাংসা করে। শালিস অমান্য করে সে প্রান্তকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর মাধ্যমে আবারও এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে। যা অত্যান্ত দুঃখ জনক।
তবে এ ঘটনার মূল হোতা হিসেবে বাউসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেনকে দায়ি করে বিক্ষোভ মিছিলে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী। এ ঘটনায় প্রান্তর বাবা ইউসুফ আলী বাদী হয়ে বাঘা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শফিকুর রহমান শফিক। বক্তব্য রাখেন বাউসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলাউদ্দিন, ইউনুস আলী, শহিদুল ইসলাম বাবু, ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিসুর রহমান পিংকু, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল করিম, বাউসা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি সাইদুর রহমান ভূট্ট, বাউসা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহবায়ক মহিনুল ইসলাম, বাউসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শাকিম উদ্দিন প্রমুখ।
এ বিষয়ে বাউসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, এ ঘটনার ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই। লোকমুখে শুনেছি প্রাপ্ত নামের ছাত্রলীগের এক ছেলেকে কে বা কারা মেরেছে। তবে আমকে কি কারনে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ করেছে বিষয়টি জানা নেই। এ বিষয়ে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ফাহিম মোন্তাসির প্রান্ত কে মারপিটের ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।