হৃদয় রায়হান কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ায় বাবা-মায়ের কবরে সমাহিত হলেন ‘লালনসম্রাজ্ঞী’ ফরিদা পারভীন। এর আগে বাদ এশা কুষ্টিয়া পৌরগোরস্থানের সামনে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ফরিদা পারভীনের জানাজায় অংশ নেন কুষ্টিয়ার শত শত মানুষ। শিল্পীর দাফন শেষে তাকে নিয়ে সশ্রদ্ধ মন্তব্য করেন কবি ও সমাজচিন্তক ফরহাদ মজহার।
আজ (১৪ সেপ্টেম্বর) রোববার বাদ মাগরিব ফরিদা পারভীনের জানাজা ও দাফনের কথা ছিল। কিন্তু ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় এশার নামাজের পর জানাজা ও দাফনের সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। রাত প্রায় সাড়ে ৮টার দিকে শিল্পীকে বহন করা ফ্রিজিং ভ্যান কুষ্টিয়া পৌরগোরস্থানে পৌঁছায়। সেখানে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় শিল্পীর ছেলে ইমাম নাহিল সুমনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শিল্পীকে শেষ বিদায় জানাতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সেখানে অপেক্ষা করছিলেন শত শত মানুষ। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন, কবি ও সমাজচিন্তক ফরহাদ মজহার, লালন-গবেষক লালিম হক, লালন একাডেমির শিল্পীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ফরিদার জানাজায় অংশ নেন। বৃষ্টিস্নাত গোরস্থানে সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় বিদায় নেন প্রখ্যাত লালন-সঙ্গীতশিল্পী ফরিদা পারভীন।
ফরিদা পারভীনকে সমাধিস্থ করার পর ফরহাদ মজহার বলেন, ‘ফরিদা পারভীনকে শুধু শিল্পী বললে অন্যায় হবে। তার অবদানটা শিল্পী হিসেবে নয়, তিনি ফকির লালন শাহকে পরিচিত করেছেন সারা বাংলাদেশে, এই উপমহাদেশে, সারা বিশ্বে। আগে আমরা একজন ফকির সম্পর্কে জানতাম, তার গান পল্লীগীতি হিসেবে শুনতাম। আব্দুল আলীম পল্লীগীতি হিসেবে তার গানগুলো গাইতেন, আমরাও সেভাবেই শুনতাম। কিন্তু ফরিদা যখন গাইলেন, আমরা প্রথম বুঝলাম, আমরা একজন সাধকের গান শুনছি। বাংলার ভাবজগতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষের চমৎকার গান শুনছি। এই কাজটা ফরিদা করেছেন, তিনিই প্রথম করেছেন। প্রথম যিনি করেন, তার অবদানটা অসামান্য হয়।’
ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘তার চলে যাওয়ার ক্ষতি পূরণ হবার নয়। ফরিদা পারভীন একটা ধারা তৈরি করে দিয়েছেন। যেই ধারা থেকে আমরা গড়ে উঠেছি। কুষ্টিয়াবাসীর জন্য সত্যিকার অর্থেই আজ দুঃখের দিন। কুষ্টিয়াকে সত্যিকার অর্থেই আমরা সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এটা হবে উপমহাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক নগরী। সেই ভিত্তিটা ফরিদা পারভীন তৈরি করে গেছেন।’
ফরিদা পারভীনকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্তানের খাদেম নুরু। তিনি বলেন, ‘শিল্পী ফরিদা পারভীনের বাবা কুষ্টিয়া হাসপাতালে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে ছোটবেলায় তিনি কুষ্টিয়ায় বেড়ে উঠেছেন। আমরা একই এলাকার মানুষ ছিলাম। ছোটবেলায় আমরা ফরিদা পারভীনের সঙ্গে খেলাধুলা করতাম। সমবয়সী হওয়ায় আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। বড় হওয়ার পর তিনি কুষ্টিয়ার বাইরে চলে যান, এজন্য যোগাযোগ ছিল না। তবে দেখা হলে আমাদের কথা হতো।’
প্রসঙ্গত, বরেণ্য লোকসঙ্গীত শিল্পী ফরিদা পারভীন চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্বামী এবং চার সন্তান রেখে গেছেন।
বাড়ি নং-৬৬, সোনারগাঁ জনপথ রোড, সেক্টর -১১, উত্তরা ঢাকা-১২৩০
মোবাইল নং: ০১৯৮৫২৩১১১২
Copyright © 2025 টপ নিউজ প্রতিদিন | বাংলা নিউজ পেপার. All rights reserved.