
এম আবু হেনা সাগর,কাপ্তাই :-
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের অপর নাম পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাই। বাঙালি ও আদিবাসী উভয়ের সাথে প্রাণচাঞ্চল্যে এখানকার প্রকৃতি যেন নিবিড় বৈচিত্র্যের মেলবন্ধন। দেখা মেলে পাহাড়, উঁচু-নিচু টিলা,ঝর্ণা,লেক আর আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ। এখানকার বন-পাহাড়ে বৃক্ষরাজিতে ভরপুর। কর্ণফুলী নদীর উপশাখার তীরবর্তীতে রুপে ভরা সবুজময় পাহাড়। যতদুরই চোখ পড়ে, ততদূরই মায়াবী দৃষ্টি অপলক নয়নে থাকিয়ে রয়।
১১ জুলাই সকাল ৮টায় চট্টগ্রামের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে সিএনজি যোগে রওয়ানা দিই। সে সিএনজি থেকে নেমে পড়ি লিচুবাগানে। অন্য একটি সিএনজিতে করে কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা। মাঝপথেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দুয়েকটা চেক পোস্ট পার হয়েই পৌঁছে গেলাম নিদিষ্ট গন্তব্যস্থল সে কাপ্তাই স্টেশনে। সেখানে নেমে ফোন দিলাম ছোটভাই সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষাথী মো: ইব্রাহিমকে। স্টেশনে এক কূলিং কর্ণার থেকে হালকা নাস্তা সেরে বের হতে না হতেই রিসিভ করতে চলে আসল ইব্রাহিম। এই সড়কে সিএনজি ছাড়া অন্য যানবাহন তেমন একটা চোখে পড়েনা। যেন চিরচেনা সবুজের বুক চিরে চলছে তিনচাকার যান।
তাকে নিয়ে কাপ্তাই স্টেশন থেকে সিএনজি নিয়ে সোজা চলে গেলাম নেভী ক্যাম্প পিকনিক স্পটে। সেখানে মাঝপথেই চেক পোস্ট। সেটি পার হয়ে সোজা চলে গেলাম পিকনিক স্পটে।
সিএনজি থেকে নেমেই টিকেট কাউন্টার। চল্লিশ টাকায় দুটি টিকেট সংগ্রহ করে প্রবেশ করলাম সে নেভী পিকনিক স্পটে। ভেতরে বিধাতার অকৃত্রিম সৃষ্টি। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সবখানেই। কাপ্তাইয়ের নেভী পিকনিক স্পট লেকের স্বচ্ছ জল আর সবুজ পাহাড়ে মন বিমোহিত করেন ভ্রমণ পিপাসুদের।জীবনে প্রথম দেখার সেই স্বাদটা যেন মিটে গেল।
দুইজনেই লেকের ভেতরে আঁকা বাঁকা,উঁচু-নিচু পাহাড়ী পথ বেয়ে হাটতে শুরু করি। প্রায় ঘন্টারও বেশি সময় হেঁটে ক্লান্ত শরীরে কিছুক্ষণ বসে ফের শুরু করি হাটা। লেকের চারপাশের সৌন্দর্য্যে যেন উপভোগ। পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে পাহাড়ী আর জলরাশির ভিউটা দেখে বেশ কয়টা ফটোসেশনে যুক্ত হলাম। কিন্তু আতিথিয়তার কমতি ছিলনা ভাই ইব্রাহিমের। যেটি অতুলনীয়, ভুলার নয়।
টিকেট কাউন্টারের কুলিং কর্ণার থেকে হালকা নাস্তা সেরে সিএনজি নিয়ে চলে আসলাম কাপ্তাই সরকারী সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। সে ক্যাম্পাস জুড়ে ফুলে ফুলে সজ্জিত আর সবুজ গাছগাছালি ভরা। সবমিলিয়ে অসাধারণ পরিবেশ।
ইব্রাহিমের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসার পূর্ব মুহুর্তে ক্যাম্পাসের প্রবেশ পথেই আমগাছের ছায়ায় ক্ষনিকের আড্ডায় মেতে উঠি। সে জুমার নামাজের আগে ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম কাপ্তাই স্টেশনে। সেখানে মসজিদে কাঠ ফাটা রোদের মাঝে জুমার নামাজ আদায় পরবর্তী দুপুরের খাবার খেতে গিয়েই যেন রান্নার অতুলনীয় স্বাদ। ঘরোয়া পরিবেশে দুপুরের খাবার অন্যরকম।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর হেঁটে আসলাম কাপ্তাইয়ের শেষ প্রান্তে জেটিঘাটে। পথিমধ্যে দেখা পেলাম কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত দেশের প্রথম পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ঐতিহ্যবাহী কাপ্তাইয়ের বাঁধ। একটু পরেই চোখ পড়লো জেটিঘাট দিয়ে নদীর ওপার থেকেই রাঙ্গামাটির বিভিন্ন পাহাড়ী জনপদ হয়ে বোট দিয়ে কাঁচা তরিতরকারি আসার দৃশ্য। অচেনা জায়গায় ভ্রমণের কাঙ্খিত লক্ষ্য ছিল অনন্য অতুলনীয় ও দারুন মজাদার। ভ্রমণটি সফলতার দ্বারপ্রান্তে।