স্টাফ কোয়ার্টার
একের পর এক অনিয়ম দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন গণপূর্ত ঢাকা মেট্টো জোনের স্টাফ অফিসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখ। যেখানে চাকরি করেছেন সেখানেই দুর্নীতির রাম রাজত্ব কায়েম করেছেন। গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালিন ভুয়া কাজ ও বিল ভাউচারে লোপাট করেছেন ১০ কোটি টাকা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখের দুর্নীতি তদন্তে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অধিশাখা-১ এর উপ-সচিব মোসা. সুরাইয়া বেগম এক অফিস আদেশে উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটিকে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেন। মন্ত্রণালয়ের ১৫.০০.০০০০.০১৩. ২৭. ০০১. ১০. ১০৯০/১(৪)নং স্মারকে চিঠিতে বলা হয়েছে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তপূর্বক ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৮ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় তৎকালিন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-২ এর অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী। সদস্য সচিব করা হয় সিনিয়র সহকারী সচিব তারিক হাসান।
তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন জোনের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মো. মঈনুল ইসলাম। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সংস্থাপন) নন্দিতা রানী সাহা ওই বছরের ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর ‘ভুয়া কাজ ও বিল ভাউচারে লোপাট ১০ কোটি টাকার বিষয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে’ শিরোনামে তার দপ্তরের ২৫.৩৬.০০০০.২১৩.২৭৫৫৯. ১৯.১০৮৭ নং স্মারকে একটি চিঠি ইস্যু করেন। তদন্তপূর্বক ৩ কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামত প্রেরণ করার জন্য তদন্ত দলকে নির্দেশ দেন।
একই বছরের ৭ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর আঞ্চলিক অফিসের সাবেক উপ-পরিচালক নাজমুস সায়াদাত ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের ১০ কোটি টাকা লোপাটের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। ঝিনাইদহে অবস্থানকালে তিনি গণপূর্ত অফিসের ঠিকাদারি কাজের নথি, বিল, ভাউচার দেখেন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত রিপোর্টে তার বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করলেও তিনি শাস্তি পাওয়ার বদলে প্রাইজ পোষ্টিং বাগিয়ে নেন।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখ কাজ না করেই কোটি কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেছেন বলে বিভিন্ন পত্রিকা ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে খবর প্রচার হয়। দুর্নীতির খবর ফাঁস হয়ে পড়লে তড়িঘড়ি প্রকল্পগুলো আবারও সম্পন্ন করেন। ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়া ডরমেটরি ভবন, নন হেজেটেড ডরমেটরি ভবন, জেলা জজের বাসা, সাব-ডিভিশন অফিস ও গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর বাসাসহ বিভিন্ন অফিস মেরামত ও রং করেন। অথচ এই সব কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে দেখিয়ে সেই বছরের জুনের আগেই ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়েছিলেন তিনি।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ই-জিপি টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়। কিন্তু বিধি ভঙ্গ করে মেন্যুয়ালি নোটিফিকেশন অফ এওয়ার্ড (নোয়া) দেয়া হয়। যা পিপি’র বিধি বহির্ভূত কাজ। প্রশ্ন উঠেছে ই-জিপি টেন্ডার আহ্বান করলে একজন ঠিকাদার অর্ধশত কাজ কিভাবে পায়? এ ভাবেই তিনি ২/৩টি লাইসেন্সের বিপরীতে ছোট বড় শত শত কাজ পাইয়ে দিয়েছেন, এর মধ্যে কিছু কাজ না করে আবার কিছু কাজ আংশিক করে ৯ কোটি টাকারও বেশি টাকা লোপাট করেছেন।
তার এই সব দুর্নীতির মূল সহায়ক হিসাবে সার্বিক সহযোগিতা করেন ঝিনাইদহের তৎকালিন উপসহকারি প্রকৌশলী ফিরোজ আহম্মেদ। সব কাজ পরিচালনা করতেন এবং ভুয়া প্রত্যয়নপত্র বানিয়ে দিয়ে কাজের সমাপ্ত দেখাতেন। এভাবেই দুর্নীতি করে ফিরোজ আহম্মেদও কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এত দুর্নীতির পরেও নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখের খুটির জোর কোথায় যে তিনি এখনো পূর্বের মতোই দাপটের সঙ্গে অফিস পরিচালনা করে যাচ্ছেন? নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখ বলেছেন, সাংবাদিকরা যে যাই লিখুক তাতে আমার কিছুই হবে না। আর যত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটিই আসুক না কেন তারা আমার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিবে না।
ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালিন মো. কায়সার ইবনে সাঈখ ২০২১-২২ অর্থবছরে মেরামতের কাজের প্রাক্কলন ও নামমাত্র কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল পরিশোধ করা হয়। ভুয়া কাজ ও বিল ভাউচারে তিনি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। অনুমোদন পাওয়া প্রাক্কলিত অর্থ কাজে লাগাতে গোপনে কাগজ-কলমে দরপত্র আহ্বান দেখিয়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দেখাতে হবে জুনের মধ্যেই। তা না হলে বরাদ্দ অর্থ সরকারের কোষাগারে ফেরত যাবে।
তাই গোঁজামিল দিয়ে, কখনও কাজ না করেই কাগজ-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল দিয়ে দেন তিনি। এর প্রমাণও মিলেছে। ঢাকার তেজগাঁও ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের বাংলো-১-এর দরজা, জানালায় থাই গ্লাস লাগানো, টাইলস বসানো, রঙ করা এবং কেন্দ্রীয় রেকর্ড ভবনের পয়ঃনিষ্কাশন লাইন মেরামত ও গ্যারেজ কাম-ড্রাইভার কোয়ার্টারের নিচতলায় গ্যারেজগুলোর সিলিং মেরামত, বিভিন্ন দরজা মেরামত, স্যুয়ারেজ লাইন মেরামত কাজের জন্য ২০২২ সালের গত ৫ জুন ১৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার একটি প্রাক্কলন অনুমোদন করেন ঢাকা গণপূর্ত সার্কেল-২-এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক।
কিন্তু অর্থবছরের শেষ মুহূর্তে অনুমোদন পাওয়া এ কাজ শেষ না করেই বিল পরিশোধের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছেন ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার ইবনে সাঈখ। নির্বাহী প্রকৌশলী গোঁজামিল দিয়ে কাজ না করেই কাগজ-কলমে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল দিয়ে দেন। গণপূর্ত অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্থাপনা মেরামত বা বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা (এপিপি) খাতে গণপূর্ত অধিদফতরকে মোট ৮১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে স্থাপনা মেরামতের জন্য আবাসিক ভবনে ৫ হাজার ৯১২টি কাজের জন্য ৪০৫ কোটি এবং অনাব।