
বিশাল রহমান, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
নিখোঁজের ৯ দিনেও খোঁজ মেলেনি তিন মাদ্রাসাছাত্রীর,মাদ্রাসা প্রধানকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
নিখোঁজ হওয়ার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও ৩ মাদ্রাসাছাত্রীর সন্ধান পায়নি এখনও পরিবার। ঠাকুরগাঁও সদরের আয়শা সিদ্দিকা মাদ্রাসা থেকে ওই তিন ছাত্রী নিখোঁজ হয় চলতি মাসের ৮ তারিখে। পরিবার বলছে, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও নিরাপত্তার ঘাটতির কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।
নিখোঁজ ছাত্রীরা হলেন- দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মুরারিপুর গ্রামের শাহজালালের মেয়ে জুঁই (১৪), একই উপজেলার গণকপয়েন গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তামান্না (১৬) এবং ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গোবিন্দনগর এলাকার রবিউলের মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা (১৩)। জুঁই ও তামান্না আলিম শাখায় অধ্যয়নরত এবং আয়শা হাফিজি বিভাগে পড়াশোনা করছিলেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে মাদ্রাসায় সর্বশেষ দেখা যায় তাদের। ভোরে ডাকতে গেলে রুমে পাওয়া যায়নি। পরে মাদ্রাসার দোতলার বারান্দায় মশারি ঝুলতে দেখে কর্তৃপক্ষ ধারণা করে তারা পালিয়ে গেছে। শহরের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ১টার দিকে তারা রিকশায় প্রথমে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ডে যায়, পরে রেলস্টেশনে পৌঁছায়। সেদিন ট্রেন না থাকায় তারা একটি আবাসিক হোটেলে ভোর ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে। এরপর হোটেল ম্যানেজারের সহায়তায় আবার স্টেশনে গিয়ে কিছুক্ষণ থেকে পীরগঞ্জগামী একটি অটোরিকশায় রওনা হয়।
এ ঘটনায় আয়শা সিদ্দিকার পরিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেছে।
নিখোঁজ তামান্নার মা আখলিমা বেগম বলেন, মাদ্রাসায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। ভবনের বারান্দায় কোনো গ্রিল ছিল না, প্রহরীও রাখা হয়নি। আমরা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের ওপর ভরসা করেই মেয়েদের সেখানে রেখেছিলাম। কিন্তু এত বড় অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না।
আয়শার বোন লাবনী জানান, কিছুদিন আগে তার বোন মাদ্রাসায় নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছিল এবং দ্রুত বাড়ি নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছিল। আমরা সেই সময় নিয়ে আসিনি। হয়তো অতিরিক্ত নির্যাতনের কারণেই তারা পালিয়েছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা হামিদা বেগম বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল। তবে, নির্যাতনের অভিযোগ ভুল। আমি মনে করছি, ওরা হয়তো কোনো ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মুফাসসির মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা যদি নির্যাতন করতাম, তাহলে তারা বাড়ি চলে যেত। পালিয়ে যাওয়ার দায় আমাদের নয়।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, মেয়েদের কাছে কোনো মোবাইল না থাকায় তাদের অবস্থান নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে, আমাদের টিম কাজ করছে। অতি শিগগিরই নিখোঁজ কিশোরীদের খুঁজে বের করতে আমরা সক্ষম হব।এলাকাবাসী অবিলম্বে মাদ্রাসার পরিচালক ও প্রধান শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জোর দাবি জানান।