বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সোনা চোরাচালান চক্রের হোতা জাভেদ আকতার নামের এক কথিত সাংবাদিক ঢাকার বিমানবন্দর থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারের বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করেন, বিমানবন্দর থানার এসআই আজহারুল ইসলাম,
আটককৃত যুবকের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর বলে জানা গেছে। সাংবাদিক পরিচয়ে এতদিন চোরা চালানে সম্পৃক্ত থাকায় শহর জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জানা যায়, জাভেদ আক্তার সৈয়দপুর শহরে সাংবাদিক পরিচয়ে থানায় আটককৃত মানুষের তদবির বাণিজ্য করতো। একারনে থানা-পুলিশ ও স্থানীয় কতিপয় ব্যবসায়ীর কাছের মানুষ হিসেবে গুরুত্ব পেয়ে আসছিল। কিন্তু সে যে সোনার চোরা কারবারি তা প্রমাণের অভাবে এতদিন সরাসরি প্রকাশ হয়নি।
সম্প্রতি ৬ কোটি টাকার সোনাসহ শাহজালাল বিমানবন্দরে আটক এক ব্যক্তির স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে আটককৃত হোতার আসল পরিচয়। তার মামলার প্রেক্ষিতে গত শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে ঢাকার ডিবি পুলিশ এসে সৈয়দপুর থেকে তাকে আটক করে নিয়ে গেছে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানার একজন সাব-ইন্সপেক্টরের (তদন্তকারী কর্মকর্তা) গত ২৭ নভেম্বর তারিখে সিএমএম আদালতে দাখিলকৃত রিমান্ড আবেদন সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুরের ধলাগাছ এলাকার জিয়াউল ইসলাম (৫৮) সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পথে গত ১৬ আগস্ট বিমানবন্দর পুলিশের হাতে আটক হয়। তল্লাশিকালে তার ব্যাগে অবৈধভাবে আনা ১২টি স্বর্ণবার পাওয়া যায়। যার ওজন ৫ কেজি ৯শ' ৮০ গ্রাম। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। ধৃত জিয়াউলকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
২৭ নভেম্বর জিয়াউলকে রিমান্ডে নিলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। তাতে বেরিয়ে আসে স্বর্ণচোরাচালানের আসল রহস্য। স্বীকারোক্তিতে তিনি জানান, স্বর্ণ চোরাচালানের মূলহোতা সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ার বাসিন্দা মো. জামিল আক্তারের ছেলে কথিত সাংবাদিক মো. জাভেদ আক্তার। পাসপোর্টে তার ঠিকানা নতুন বাবুপাড়া উল্লেখ করা হলেও তিনি শহরের ইসলামবাগ সেরু হোটেল এলাকায় শ্বশুড়বাড়িতে বসবাস করতেন।
সূত্র জানায়, সোনা চোরাচালান কারবারি জাভেদ আক্তার মূলহোতা হলেও এ সিন্ডিকেটের সাথে বিচালীহাটি রোডের একজন গালামাল ব্যবসায়ী, শহীদ ডা. জিকরুল হক রোডের একজন স্টিল আসবাবপত্র ব্যবসায়ী ও শাহ হোটেলের মালিক এ ম্যানেজারের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এসব ব্যবসায়ীও আটককৃত কথিত সাংবাদিক জাভেদের চোরাচালানে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন।
ঢাকায় আটক জিয়াউল হকের ধলাগাছ বাসায় গেলে তার ছেলে জাহিদ হোসেন বলেন, আমার বাবার মেরুদন্ডের হাড়ের সমস্যা ছিল। জাভেদ আক্তার আমার বাবাকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার প্রলোভন দিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা করে দেন। আমাদের না জানিয়েই আমার বাবাকে তিনি সিঙ্গাপুরে পাঠান। পাসপোর্টে আমার বাবার মোবাইল নম্বরের পরিবর্তে কৌশলে জাভেদ আক্তারের মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। যা আমি বিমানবন্দর থানায় গেলে জানতে পারি। তিনি আরও বলেন, আমার বাবা একজন সহজ-সরল মানুষ। তিনি বৃদ্ধ ও অসুস্থ। একারনে ফেলে দেয়া পলিথিনের ব্যবসা করতেন।
জাভেদ আক্তারের সাথে শহরের শাহ হোটেল কর্তৃপক্ষেরও বেশ সখ্যতা রয়েছে। হোটেল ব্যবসা শুরুর দিকে তিনি হোটেলের যাবতীয় কেনাকাটায় সহায়তা করতেন এবং ক্যাশ টেবিলেও বসতেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
ইসলামবাগ সেরু হোটেল এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি জানান, জাভেদ আক্তারের নির্দিষ্ট কোন পেশা ছিল না। কখনো তিনি স্ক্রীণপ্রিন্টের মালামাল ব্যবসায়ী,কখনোবা নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। কিছুদিন আগে তার মা হাসিনা খাতুন, স্ত্রী মোছা. আরজু ও শ্বাশুড়ি শামিমা খাতুন সিঙ্গাপুর বেড়াতে গিয়েছিলেন। মূলতঃ জাভেদ আক্তার এদের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর থেকে অবৈধভাবে স্বর্ণ আনতেন এবং নিজে বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করতেন বলে জানান তারা।
জিয়াউল ইসলামের স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে গত শনিবার ২০ নভেম্বর রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি) সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগ সেরু হোটেল এলাকায় শ্বশুড়বাড়ি থেকে জাভেদ আক্তারকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে যায়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ (সোমবার) তাকে আদালতের মাধ্যমে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন,সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইম উদ্দিন।