আলমগীর শরীফ, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ-
ঝালকাঠির রাজাপুরের বড়ইয়া ইউনিয়নের আরুয়া সোনারগাঁও "হাসানিয়া দাখিল মাদ্রাসার" সাবেক সভাপতি আব্দুর রহমান ও সুপার আব্দুস সালাম সিকদারসহ ওই মাদ্রাসার ৯ জন শিক্ষক-কর্মচারির নামে পারিবারিক ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আর এক সাবেক সভাপতি আব্দুল হাকিম সিকদার বিভিন্ন দফতরে অর্ধশতাধিক মিথ্যা লিখিত অভিযোগ দিয়ে হয়রানি ও অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৮ অক্টোবর ২০২৪ ইং মঙ্গলবার দুপুরে রাজাপুর সাংবাদিক ক্লাবে হাজির হয়ে সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত অভিযোগ পাঠ করে এসব অভিযোগ করেন বর্তমান সুপার আব্দুস সালাম সিকদার। তিনি অভিযোগ করে জানান, তার আপন চাচা আব্দুল হাকিম সিকদার ১৯৯৭ সালে মাদ্রাসার সহসভাপতি থাকাকালিন শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতনভাতা আত্মসাত ও উৎকোচ গ্রহনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য শিক্ষক খলিলুর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক বাদী হয়ে ঝালকাঠি দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা দায়ের করলে আব্দুল হাকিম সিকদার কারাবাস করেন। সেই থেকে হাকিম সিকদার ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অর্ধশতাধিক লিখিত মিথ্যা অভিযোগ দিলে একাধিক শিক্ষক অন্যত্র চলে যায় এবং মাদ্রাসার দাখিল পাশের হার শূণ্য হওয়ায় প্রায় ১৬ বছর যাবত দাখিল শাখার বিল বন্ধ থাকে।
বিভিন্ন সময়ের এসব অভিযোগ তদন্তে মিথ্যা প্রমানিত হওয়ার ৯ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে বিল চালু হলে তিনি পুনরায় ক্ষিপ্ত হয়ে ৯ আগষ্ট ২০১৮ সাল থেকে মাদ্রাসা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে এ যাবতকাল পর্যন্ত অর্ধশতাধিক লিখিত মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে হয়রানি করে আসছে। এসব অভিযোগ ও হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে নিরুপায় হয়ে ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর আব্দুল হাকিম সিকদারকে মাদ্রাসার সভাপতি করা হয়। কিন্তু সভাপতির দায়িত্ব পাবার পর শিক্ষক কর্মচারিদের বেতনের অর্ধেক তিনি দাবি করে কিন্ত শিক্ষক কর্মচারিরা তাতে রাজি না হওয়ায় প্রায় ২ মাসের বেতন বন্ধ করে রাখে। এসব ঘটনার কারনে তাকে সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিলে তা তদন্তে মিথ্যা প্রমানিত হয়।
কিন্ত পুনরায় চলতি বছরের গত ২১ আগষ্ট ইউএনও রাজাপুর'র কাছে সাবেক সভাপতি আব্দুর রহমান ও সুপার আব্দুস সালাম সিকদার, সহকারি মৌলভী আবুল কালাম, সহকারি শিক্ষক সায়লা পারভীন, জুনিয়র মৌলভী সোয়াইভ হোসেন, সহকারি মৌলভী মাসুম বিল্লাহ, সহকারি শিক্ষক মাহবুব হাওলাদার, চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারি আলম সিকদার ও সেলিম সিকদারের নামে আরও একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন, যাহার তদন্তভার ইউএনও মহোদয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেনকে দিলে তিনি ০৬ অক্টোবর-২০২৪ ইং সরেজমিনে তদন্ত করেন। মাদ্রাসার কমিটির নবায়ন বা স্বীকৃতি বিষয়ে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তাহা সত্য নয়।
১৯৯২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মাদ্রাসা বোর্ডের নবায়ন বা স্বীকৃতি রয়েছে এবং কমিটির মেয়াদও রয়েছে আগামী বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। মাদ্রাসাটি ১৯৭৩ সালে সুপারের দাদা আব্দুল ওয়াহেদ সিকদার প্রতিষ্ঠা করলেও প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে অভিযোগকারী আব্দুল হাকিম সিকদারের বয়স ছিল ১৩ বছর কিন্তু সে নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে মিথ্যা অভিযোগ ও হয়রানি করে আসছে। এমনকি এসব মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ফেসবুুক, অনলাইন ও স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় অপপ্রচার করে মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুন্ন করেছে।
যাহা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভীত্তিহীন। লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে এসব অপপ্রচার ও হয়রানির হাত থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তিনি। সুপার আব্দুস সালাম সিকদার আরও অভিযোগ করে জানান, বিগত দিনে ৭ টি নিয়োগে আব্দুল হাকিম সিকদার সুপার আব্দুস সালাম সিকদারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন, এসব দাবি না মানায় সব সময়ই মাদ্রাসার ক্ষতিসাধনে লেগে থাকেন। মাদ্রাসার সহকারি মৌলভী আবুল কালাম অভিযোগ করে জানান, অভিযোগকারী আব্দুল হাকিম তার আপন চাচা, পারিবারিক ও পত্রিক কবলা জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে তিনি মাদ্রাসার ক্ষতি করার জন্য একের পর এক অভিযোগ দিয়ে হয়রানি ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। নতুন কর্মকর্তা এলে তার কাছে অভিযোগ দায়ের করে।
বর্তমানে সহ-সুপার ও অফিস সহকারি পদে দুটা নিয়োগ থাকায় নিজে পুনরায় সভাপতি হবার জন্য উঠেপরে লেগেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল হাকিম সিকদার জানান, তাদের অনিয়ম ডাকতে আর নিজেরা বাঁচতে নানা কথা বলে, এসব অভিযোগ সত্য নয়। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন জানান, তদন্তে উভয় পক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমান দিতে না পারায় উভয় পক্ষ সময় চেয়েছেন। তাছাড়া উভয় পক্ষ আত্মীয়স্বজন ও পারিবারিক সমস্যা থাকায় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গও সময় চেয়েছে, তারা উভয় পক্ষকে নিয়ে শালিশ বৈঠক করে মিলিয়ে দিবে বলেছে। বিস্তারিত তথ্য প্রমান দিলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।