আবুল হাশেম স্টাফ রিপোর্টার
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংঘর্ষে ইসলামী ছাত্রশিবির নেতা রায়হান আলী (২৭) হত্যায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ এক হাজার ২৫০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহত রায়হান আলীর ভাই রানা ইসলাম (২১) (মামলা নং ১৫,তারিখ ১৯/০৮/২৪)।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাসুদ পারভেজ বলেন,মামলায় সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আর অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে এক হাজার ২০০ জনকে। মামলায় সিটি মেয়র ছাড়াও আটজন কাউন্সিলরকেও আসামী করা হয়েছে।মামলা তদন্তের জন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চালানো হবে।
নিহত রায়হান আলী রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি পুঠিয়া উপজেলার মঙ্গলপাড়া গ্রামের মুসলেম আলীর ছেলে। রায়হান রাজশাহী কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করেছিলেন। গত ৫ আগস্ট সোয়া ১টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া কল্পনা হল মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে সময় গুলিবিদ্ধ হয় রায়হান। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় মারা যান।
মামলা দায়েরের সময় বাদি রানা ইসলাম ছাড়াও রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর এ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মদ সেলিমসহ দলটি নেতাকর্মীরা থানায় উপস্থিত ছিলেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে সাহেব বাজারের দিকে অগ্রসর হলে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও ডাবলু সরকারের নেতৃত্বে রুবেল, রাজীব,রনিসহ অনেক আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্র-জনতার উপর গুলি করে। তাদের আক্রমণে মারুফ মর্তুজা, ইব্রাহীম আলী, মারুফ আল হাসান, মেহেদী হাসানসহ অনেক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে গেলে রায়হান আলী আহতদের চিকিৎসা জন্য উদ্ধার করতে এগিয়ে যায়।
তখন আসামি জহিরুল হক রুবেল তার হাতে থাকা রিভলভার দিয়ে রায়হান আলীর মাথায় গুলি করে। আসামীদের নারকীয় তাণ্ডবে স্থানীয় লোকজন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসতে পারেননি। পরে রাজশাহী মেডিকেল নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকে গত ৮ আগস্ট রায়হান আলী মারা যান।
সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও ডাবলু সরকার ছাড়াও মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামীদের মধ্যে রয়েছেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইস্তিয়াক আহমেদ লিমন,সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র,১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন,১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও শাহমুখদুম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল হক সুমন,২৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী,১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু,২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজামুল আজিম,১৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার, ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরমান হোসেন, ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত হোসেন সাহু।
এছাড়াও মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি,মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার নাহান,যুবলীগ নেতা জহিরুল হক রুবেল,মহানগর সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার, মহানগরীর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাজীব, ৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি বাপ্পী চৌধুরী রনি, ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন বিপ্লব,রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ আল গালিব, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সিরাজুম মুবিন সবুজ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া,বোয়ালিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিকুর রহমান কালুকে মামলায় আসামী করা হয়েছে।
অন্যান্য আসামীদের মধ্যে রয়েছেন,ফরহাদ হোসেন বিপ্লব (৩০), পিতাঃ রাহেল হোসেন, পূর্ব বুধপাড়া, মেহেরচন্ডি, সভাপতি, মতিহার থানা, ছাত্রলীগ,রোজেল (২৮), পিতাঃ সামরুল, পাচানি মাঠ,বোয়ালিয়া, রাজশাহী, ২৩ নং ওয়ার্ড সভাপতি, আওয়ামী লীগ, আলাল (৫৫), পিতাঃ মেরাজ মন্ডল, বুধপাড়া, মতিহার, রাজশাহী, খন্দকার আরিফুল ইসলাম টাইগার (৪৫), পিতাঃ খন্দকার শামসুল আলম বাবু, লক্ষীপুর টিবি হাসপাতালের কোয়াটার, রাজপাড়া, রাজশাহী, যুবলীগ নেতা ৬ নং ওয়ার্ড, রাবোল (৩৫), পিতাঃ মেরাজ মন্ডল, বুধপাড়া, মতিহার, রাজশাহী, মহিদুল ইসলাম মোস্তফা (৪০), পিতাঃ আব্দুল খালেক, শিল্পীপাড়া, শাহমখদুম, রাজশাহী, হাসান (৪১), পিতাঃ অজ্ঞাত, ভদ্রা, চন্দ্রিমা, রাজশাহী, ডিবির সাবেক বহিষ্কৃত কর্মকর্তা কালু (৫০), পিতাঃ মজু, ডিংগাডোবা, ঘোসমাহাল, রাজপাড়া, রাজশাহী শরিফুল ইসলাম (৪২), পিতাঃঅজ্ঞাত, দোশর মন্ডলের মোড় শিরোইল বোয়ালিয়া রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্মচারী, রিমেল হাসান রিগেন (২৭), পিতাঃ মির মাখন, দেবি সিং পাড়া, আমবাগান, রাজশাহী, সহ সভাপতি, ছাত্রলীগ, রাজশাহী মহানগর, বোরহান উদ্দীন পাভেল (৩০), পিতাঃ কামরুজ্জামান, চন্ডীপুর, রাজপাড়া, রাজশাহী, যুবলীগ নেতা ৭ নং ওয়ার্ড, আশরাফুল ইসলাম জাফর (২৮), পিতাঃ কামরুল, ৯ নং ওয়ার্ড, দরগাপাড়া, বোয়ালিয়া, রাজশাহী, সেক্রেটারি, ছাত্রলীগ, রাজশাহী কলেজ, মোঃ সজিব (৩০), পিতাঃ মুজাদার আলী, খিরশিন টিকর, শাহমখদুম, রাজশাহী, ববি (৩৫), পিতাঃ আব্দুল বাঁচেন, লক্ষীপুর পপুলার ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পিছনে, রাজপাড়া, সোহেল (৩৫), পিতা: মৃত সোলায়মান, লক্ষিপুর, প্যারামেডিকেল, রাজপাড়া, রাজশাহী, ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি, রাজশাহী মহানগর, মোঃ আবির (৩০), পিতা: শহিদুল ইসলাম