নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলে আওয়ামী পন্থী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রক্ষায় মোটা অংকের ঘুষ বানিজ্য, বদলি বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্য চরম আকার ধারণ করেছে। এই নগ্ন খেলায় মেতে উঠেছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের স্বঘোষিত সভাপতি মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। তিনি অঞ্চল-৪ এ স্বাস্থ্য বিভাগের নমুনা সংগ্রহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রশিদের ছোট ভাই।
তার বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ থাকলেও দেখার কেউ নেই।গত ৫ই আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর থেকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন পদে বদলি বাণিজ্য ও দুর্নীতিবাজ আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রক্ষা করার নাম করে কমপক্ষে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিদ্দিকুর রহমান নিজেকে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে প্রচার করলেও তার কোন কমিটি বা সংগঠনের সরকারি নিবন্ধনও নেই। তারপরও এই প্রতারক সিদ্দিকুর রহমান কিভাবে তার নিজ পদে বহাল তবিয়তে আছেন তাই নিয়ে গোটা উত্তর সিটি কর্পোরেশন জুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়।
তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীরা।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি সিদ্দিকুর রহমান জাতীয়তাবাদী পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার উত্তরা থেকে আওয়ামীপন্থী ট্রেড লাইসেন্স সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম ও গোলাম মাওলা নামের দুজনকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অঞ্চল-৪ বদলি করিয়েছেন। ওয়াজেদ আলী নামের একজনকে স্প্রেম্যান থেকে অফিস সহায়ক পদে পদোন্নতি পাইয়ে দিয়ে অঞ্চল-২ এবং নগর ভবনের সংস্থাপন শাখার সহকারি মনির হোসেনকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এদের কারো কারো কাছ থেকে অনৈতিকভাবে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।এর আগে সিদ্দিকুর রহমান এবং লাইসেন্স সুপারভাইজার মাহমুদুল হাসান রোকন তদবির করে স্বৈরাচারী সরকারের শাসনামলে অঞ্চল -৪ এর আব্দুর রাজ্জাক শেখ নামের একজনকে মালি কাম নৈশপ্রহরী থেকে (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কার্য সহকারী হিসেবে (রোড কাটিং ইন্সপেক্টর) পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। রাজ্জাক দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বাগিয়ে নিয়েছেন সরকারি মোটরসাইকেল ও স্টাফ কোয়ার্টার। ঢাকায় রয়েছে তার একাধিক ফ্ল্যাট সহ অডেল সম্পত্তি। মাসে মাসে ছিদ্দিকুর এবং রোকনকে মোটা অংকের মাশোহারা দিতেন এই রাজ্জাক।শুধু তাই নয়, পল্লবীর কমিউনিটি সেন্টারে মাস্টার রোলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ক্লিনার আনোয়ার হোসেন খোকনকে (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অঞ্চল ২ এর অফিস সহায়ক করা হয়েছে। জসিম উদ্দিন হাওলাদের নামের এক কবর খোদাইকারককে অঞ্চল ২ অফিস সহায়ক করা হয়েছে। খোকন এবং জসিম ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন শ্রমিক কর্মচারী লীগের যথাক্রমে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।অপরদিকে ট্রেড লাইসেন্স শাখার দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে নিউজ করতে গত ১৬ মে দৈনিক পাঞ্জেরীর বিশেষ প্রতিনিধি ওসমান গনি বাবুল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪ সরেজমিনে যান। এ সময় শ্রমিক কর্মচারী লীগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা তার উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় মামলা হয়। অভিযুক্তরা সবাই আওয়ামীপন্থী। এবার সুযোগসন্ধানী সিদ্দিকুর রহমান অভিযুক্তদের পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচাতে এক নাটকীয় কৌশলের জন্ম দেয়। তারই অংশ হিসাবে গত ৩/৪ দিন আগে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের স্বঘোষিত সভাপতি সেজে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, নগর ভবন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বরাবরে একটি আবেদন করেন।আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার বাদী উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে উৎকোচ না পেয়ে তিনি মামলা করেছেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪ এর এক রেভিনিউ সুপারভাইজার সাংবাদিক কে বলেন, মোঃ সিদ্দিকুর রহমান দীর্ঘদিন ধরেই এই অঞ্চলে চাকরি করছেন।
তার মূলত প্রধান কাজই হচ্ছে টাকার বিনিময়ে তদবির বাণিজ্য এবং ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন বাণিজ্য করা। টাকা হলে তাকে দিয়ে সবকিছুই করানো সম্ভব। তিনি এবং তার সহযোগীদের কথা না শুনলে সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের তাদের হাতে নাজেহাল হতে হয়। শুধু তাই নয়, তাদের অত্যাচারে আবেদ সাহেবের মত আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিরবে কেঁদে কেঁদে বিদায় নিতে হয়েছে। তার মতো ঘৃণিত প্রতারকের শাস্তি দাবি করেছেন তারা।