হৃদয় রায়হান কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের একটি টাওয়ার। বৃহস্পতিবার দুপুরে মিরপুর উপজেলার সাহেবনগর
‘নদীর কূলে বইসি আছি। তিনবার শব্দ হইল। দেখছি টাওয়ারটা মুচড়া পইড়ি গেল। দুই মিনিটের ভেতর মুচড়া পইড়ি গেল। সবাই চিল্লা উঠিছি। এখন আমাদের বাড়িঘর নিয়ে চিন্তা। কী করব? হু হু করে শব্দ হচ্ছে। ভয় কাটছে না। টেনশনের ভেতর সবাই।’
কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের গৃহবধূ রুমা খাতুন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তাঁর বাড়ির সামনেই পদ্মা নদীর ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের একটি টাওয়ার নদীতে ভেঙে পড়ে। হুমকির মুখে আছে নদীতীরবর্তী বসতবাড়ি, ফসলি জমি, কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কসহ বিদ্যুতের আরও কয়েকটি টাওয়ার।
এমন পরিস্থিতিতে চরম উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন বাসিন্দারা। এদিকে টাওয়ার ভাঙার পরপরই কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন গ্রামবাসী। এতে সড়কের উভয় পাশে প্রায় এক কিলোমিটার যানবাহন আটকা পড়ে। প্রচণ্ড গরমে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বেলা তিনটা পর্যন্ত অবরোধ ছিল বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারও পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়েছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন। চরম আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকার হাজারো মানুষের। গত এক মাসে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক শ হেক্টর ফসলি জমি। হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি, সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সুমন বলেন, ‘যে অবস্থা, যেকোনো সময় মহাসড়ক ভেঙে যাবে। গ্রামসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাবে। রাতে ঘুম আসে না। আমরা অসহায়। কেউ কিছু করছে না। প্রধান উপদেষ্টার কাছে খবরটা পৌঁছে দেন। ভাঙন রক্ষায় যেন দ্রুত কাজ শুরু করে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সাহেবনগর ও মির্জানগর এলাকায় পদ্মা নদীর তীরে কয়েক শ মানুষ বসে আছেন। তারা পানির তোড় দেখছেন। টাওয়ার ভেঙে পড়া জায়গায় কয়েকজন বসে ছিলেন। বললেন, গত বছরও নদীতে চর ছিল। গত এক মাসে ৫০০ মিটার ভেঙে গ্রামের দিকে চলে আসছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য তাঁরা এক মাস ধরে আন্দোলন করছেন। কয়েক দিন আগে মানববন্ধন, জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কার্যালয় ঘেরাও, স্মারকলিপি প্রদান ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। পাউবোর কর্মকর্তারা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে যায়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় না।
কুষ্টিয়ার বটতৈল গ্রিডের প্রকৌশলী আবু তালেব বলেন, ভেঙে পড়া টাওয়ারে কয়েক দিন আগে থেকেই বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ ছিল। এই লাইন দিয়ে ভেড়ামারা থেকে ফরিদপুরে বিদ্যুৎ আনা-নেওয়া হয়। ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সঞ্চালনে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। বিকল্প লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) শারমিন আখতার বলেন, নদীভাঙন হচ্ছে এটা সত্য। প্রায় দিনই সেখানে আন্দোলন হচ্ছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
পাউবোর কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে নদীতে ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে নদীর ডান তীরে কুষ্টিয়ার অংশে ভাঙন বাড়ছে। ভাঙনকবলিত কয়েকটি স্থান শনাক্ত করা হয়েছে। সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। নদীতে এখন পানি বেশি। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সব প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে আছে।