রবিউল আলম রাজু
রাজধানীর উত্তরায় মারগারিটা লাউঞ্জ নামের একটি মদের বারের মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে দুই কাস্টমারকে ছুরিকাঘাত ও হামলার করা অভিযোগ উঠেছে। হামলায় তারা গুরুতর আহত হলেও অভিযোগ দেওয়ার তিন দিনেও মামলা নেয় নি পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফের সাংবাদিক নুরুল আমিন হাসানকে মেরে ফেলার হুমকি বার মালিক এম এ বাশার খান ওরফে সায়মন খানের।
উত্তরার জসিমউদ্দিনের প্যাড়াডাইজ ভবনের সামনের পিছনের রাস্তায় সোমবার (১৯ আগস্ট) ভোরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মামুন মিয়া (৩০) ও ইরান সানী (৩০) নামের দুই যুবক আহত হয়েছেন। তারা বারটির কাস্টমার ছিলেন। আহতরা ওই দিনই উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) রাতে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ বারটিতে তদন্তে যায়।
হামলায় আহতরা হলেন, রাজধানীর তুরাগের নয়ানগর এলাকার আব্দুল শহিদের ছেলে মামুন মিয়া এবং তুরাগের বাউনিয়ার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে ইরান সানি।
আহত ইরান সানী আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'আমরা মার্গারিটা বারে খেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে ঢুকতে দেয় নি। পরে উপর থেকে ধাক্কা-ধাক্কি করে নিয়ে পাঠিয়েছে। তারপর আমরা নিচের রাস্তায় এসে বসলে মামুন ও হৃদয় নামের দুই লোক পাঠায়। তারা বারের গুন্ডা। তারপর ওরা এসে হাতাহাতি শুরু করে। তারপর বার থেকে মালিক সায়মন, ম্যানেজার আজিজ, সজল, বাউন্সার নাদিম, মাসুদ, খসরুল, জসিমসহ বারটির অন্যান্য বাউন্সার, স্টাফ, সিকিউরিটি গার্ডসহ ৩০/৪০ জন নেমে আসে। পরে তারা ব্যাস বলের ব্যাট, হকিস্টিক, এসএস পাইপ দিয়ে আমাদেরকে পিটিয়ে আহত করে। সেই সাথে আমার পিঠে সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে ছুরিকাঘাত করে।'
তিনি বলেন, 'রাস্তার লোকজন আমাকে ধরে প্রথমে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে আমি কুয়েত বাংলাদেয়া মৈত্রী হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। ছুরিকাঘাতের কারণে পিঠে নয়টি সেলাই লেগেছে। এছাড়াও হামলায় ডান পায়ের রানে, বাম চোখের নিচে আঘাত পেয়েছি।'
সানি বলেন, 'হামলাকালে তারা আমার গলা থেকে ৭ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, ২৩ হাজার ২০০ টাকাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। সেই সাথে আমার মোবাইল ফোন ভেঙ্গে ফেলে।'
হামলায় আহত ও থানায় অভিযোগকারী ভুক্তভোগী মামুন মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'প্রথমে সানিকে মারধরের পর ওকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যায় লোকজন। তারপর ৩০/৪০ জন আমারেও এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করছে। তখন সায়মন লোহার পাইপ দিয়ে আমাকে চার-পাঁচটা বারি দিয়েছে। তারপর আমাকে ১০/১২ জন তুলে নিয়ে বারের নিচের লোহার গেটের ভেতরে নিয়ে গেছে। তারপর তারা আমায় পার্কিংয়ে ফেলে এলোপাথাড়ি পিটাইছে।'
তিনি বলেন, 'হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় লোহার রড, পাইপের আঘাতে দুই জায়গায় ফেটে গেছে। সেখানে ৯টি সেলাই লেগেছে। এছাড়াও ডান কাধে, ডান পায়ের হাটুতে ও বাম পায়ের রানসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।'
এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় উত্তরা মার্গারিটা বারটির মালিক সায়মন, ম্যানেজার আজিজ, ভাড়াটে গুন্ডা মামুন, হৃদয়সহ নয় জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ২০ জনের নামের একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ মফিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'অভিযোগের বিষয়টি সাব ইন্সপেক্টর সুমন চন্দ্র দাস দেখতেছেন। আপনি তার সাথে কথা বলেন।'
অপরদিকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমন চন্দ্র দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'বারের ঢুকতে দেয়া নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সাত আট জনের নাম উল্লেখ করে মামুন একটি অভিযোগ দিয়েছেন। সেখানে বারটির পার্টনার সাময়নকে প্রধান আসামী করা হয়েছে।'
অভিযোগে বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে মার্গারিটা বারটির মালিক এম এ বাশার খান ওরফে সায়মন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে আজকের পত্রিকার রিপোর্টার নুরুল আমিন হাসানকে বিভিন্ন খারাপ ভাষায় গালমন্দ ও হুমকি ধামকি দেন। সেই সাথে সায়মন সাংবাদিক হাসানকে বলেন- 'তুই থানাতে আছস না, থানাতেই বস। আমি এসে তোকে দেখতেছি। তোরও খবর আছে। তোকেও শেষ করে দিব। এ ঝামেলায় তোকেও ফেলবো।'
প্রাণ হুমকির ঘটনায় প্রতিবেদক নুরুল আমিন হাসান উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। যার জিডি নং- ১০৮৯।