গাজীপুরে কারখানা সমূহে ভয় ও ত্রাসের অপর নাম মোহাম্মদ আলী

গাজীপুর প্রতিনিধি :

কিছুদিন যাবত সামাজিক মাধ্যমে একটি প্রবাদ বেশ আলোড়ন সুষ্টি করেছে “আগে একদল করেছে, এখন অন্য দল করছে ”এই প্রবাদটিকে পিছনে পেলে নিজের আধিপত্য ও সাম্রাজ্য ধরে রেখেছেন মোহাম্মদ আলী। যিনি স্বৈরাচার আমলে ও ছিলেন প্রচন্ড প্রতাপশালী, হয়ে উঠে ছিলেন গাজীপুর মহানগরীর গাছা এলাকার ঝুট কিং। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কে এই মোহাম্মদ আলী।

অনুসন্ধান ও স্থানীয় নেতা কর্মীদের মাধ্যমে জানা যায়, মোহাম্মদ আলী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে জড়িত। দীর্ঘদিন যাবত গাছা মেট্রো থানা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও নগরীর ৩৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জাতীয়তাবাদের রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও ছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অত্যান্ত বিশ্বস্ত। জাহাঙ্গীরের ছত্র ছায়ায় নিয়ন্ত্রন করতেন গাছার এলাকার ফ্যাক্টরীর ঝুট। সাবেক মেয়রের আশীর্বাদে আওয়ামী আমলেও ছিলেন বহাল তবিয়তে। অনেকেই এখন থাকে আ.লীবাজদ (আ.লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা) মোহাম্মদ আলী নামে চিনেন।

স্বৈরাচারদের মিত্রদের সাথে স্বক্ষতা বজায় ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অবতীর্ণ হয়েছেন মহানায়ক হিসেবে। ৫ আগষ্টের পরেও ভুলতে পারেননি পুরনো মিত্রদের। ঝুট ব্যাবসা নিয়ন্ত্রণে নগরীর সাইনবোর্ড এলাকায় একাধিকবার ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীদের নিয়ে দলবদ্ধভাবে মোটর সাইকেলে অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন ফ্যাক্টরীর গেইটে উচ্চ শব্দে হর্ণ বাজিয়ে, মহড়া দিয়ে ভয়-ভীতি দেখানোর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

পূর্বের মতো এখনো নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও আ.লীগের সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে কোট কৌশলে ঝুট নিয়ন্ত্রণ ও কারখানা সমূহে ভয় সৃষ্টি করে, আ’লীগ নেতাকর্মীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও বেশ খ্যাতি রয়েছে তার। তার এমন কর্মকান্ডে এলাকার শিশু-কিশোর থেকে মহিলা ও সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় ও আতংকের নাম হয়ে উঠেছেন তিনি। রাস্তায় চলাচল করতে আতংকের মধ্যে থাকতে হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক সাধারণ মানুষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাছা থানার এক বিএনপি নেতা বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর মোহাম্মদ আলী দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে দলের আদর্শ পরিপন্তী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছিলেন। বিষয়টি আমি জানার পর থাকে আমাদের প্রিয় নেতা দেশ নায়ক ও তারণ্যের অহংকার তারেক রহমানের নির্দেশনার দোহাই দিয়ে এমন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে বললে, সে ক্ষিপ্ত হয়ে জনসম্মুখে আমাকে হত্যার উদ্ধেশ্যে গুলি ছুড়ে। গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে সে সময় আরো বেশ কয়েকটি গুলি করে। আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেচে যাই।

এলাকাবাসী আরো জানান, পারিবারিক বিরোধের জের দরে মোহাম্মদ আলী তার মা রুপবান বেগম (৬৫) ও ছোট ভাই জামাল (৩৫) মামা আবুল হোসেন কে কুপিয়ে আহত করেছেন। তার বাহিনীর সদস্যরা এলাকার এক শ্রমজীবি কাঁলা চান (৫৫) কে কুপিয়ে গুরুতর আহত করলে পরবর্তী সময়ে এলাকাবাসী শহিদ তাজ উদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। আক্ষেপ করে এলাকাবাসী বলেন, যে নেতা ক্ষোভের জেরে নিজের মা, ভাই, মামাকে কুপিয়ে আহত করতে পারে তার কাছে দল ও দলের আদর্শ নিরাপদ না।

বিগত সাড়ে পনের বছরের ধারাবাহিকতায় গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও সাইনবোর্ড এলাকার বিভিন্ন শিল্প-কারখানার সামনে কিশোর গ্যাং, আ.লীগের বিভিন্ন নেতা কর্মীদের নিয়ে শোডাউন করেন মোহাম্মদ আলী ও তার সহযোগীরা। এতে ওই এলাকায় ভীতিকর থমথমে অবস্থার সৃষ্টি হলে প্রাণ ভয়ে পথচারি ও দোকানীরা দোকান বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বাধ্য হয় বলে দাবি করেন অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী আরো জানায়, মোহাম্মদ আলী ও হাফিজের নেতৃত্বে গত কয়েকদিন যাবত ইন্টারস্টপ, নর্প ও রিয়াজ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে চিহ্নিত ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করে আসছেন। যার কারণে উক্ত ফ্যাক্টরী সমূহে শ্রমিকদের মাঝে ভীতি তৈরি হওয়ায় অনেকেই কাজে আসতে ভয় পাচ্ছেন।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ আলীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তিনি অভিযোগ অস্কীকার করেন করে বলেন, “প্রতিপক্ষ গাছা থানা বিএনপির কিছু নেতা আমার ব্যবসা বাণিজ্য দখলে নিতে এর আগেও আ’লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী নিয়ে মহড়া দিয়েছে। সোমবারও তাদের মহড়া দেয়ার সংবাদ পাই। এর প্রেক্ষিতে প্রতিপক্ষের মহড়া বানচাল করতেই আমরা বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে সড়ব ছিলাম। তিনি বলেন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আমি সবচেয়ে মামলা হামলার শিকার হয়েছি।”

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার মুঠোফোনে বলেন, “দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক মহড়া দেওয়া সম্পূর্ন নিষেধ রয়েছে। এমন অভিযোগ প্রমানিত হলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।”

Leave a Reply